ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশিকুর রহমান নিজ অফিস কক্ষ ছেড়ে গাছতলায় দপ্তর বসিয়ে কাজ শুরু করেছেন। গত ৩১ অক্টোবর থেকে এ কাজটি করছেন তিনি। তার ভাষ্য মতে, মানুষের মধ্যে পুলিশি ভীতি কাটানোর পাশাপাশি জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টায় তিনি এ উদ্যোগটি নিয়েছেন।
২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন মোহাম্মদ আশিকুর রহমান। তার বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায়। অপরাধ নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ২০১৮ সালে পুলিশ বিভাগ থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এর আগে মিঠাপুকুর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকাকালীন সেখানে তিনি খোলা আকাশের নিচে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেন।
আশিকুর রহমান জানান,পুলিশের কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা করা, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য যে, পুলিশের কাছে আসতে সাধারণ মানুষের মধ্যে জড়তা কাজ করে। জনগণের আরও কাছাকাছি যাওয়ার ভাবনা থেকে কিছু করার ভাবনা আসে মাথায়। এই ভাবনা থেকে ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর রংপুরের মিঠাপুকুর থানায় নিজ কক্ষ ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেন আশিকুর। পরে সেখান থেকে ঠাকুরগাঁও বদলি আসার পর মিঠাপুকুরের সেই ভাবনার ধারাবাহিকতায় গত ৩১ অক্টোবর থেকে এখানেও গাছতলায় বসে মানুষের কথা শুনতে লাগলেন তিনি। বসার জায়গাটির নাম দিলেন জনগণের দরবার।তিনি আরও বলেন, থানায় আসার সময় মানুষ কোনো রাজনৈতিক নেতা, কোনো সাংবাদিক, কোনো উকিল কারো মাধ্যম হয়ে আসে। যখন তারা মাধ্যম হয়ে আমার কাছে আসে তখনতো প্রতিবন্ধকতা কিছু থাকে। এই প্রতিবন্ধকতা এড়নোর চিন্তা করতে করতে মনে হয়-ওসির রুমে ঢুকতে যেহেতু মানুষ ভয় পায়, তাহলে সেই ভয়কে কীভাবে কাটানো যায়? পরে তিনি মিঠাপুকুরের চিন্তাটি এখানে বাস্তবায়ন শুরু করলেন।
আজ রবিবার দুপুরের দিকে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক পেরিয়ে থানার ভবন। এক পাশে কাঁঠাল গাছের নিচে স্থাপন করা একটি সাইনবোর্ড-তাতে লেখা ‘জনগণের দরবার।’ সামনে টেবিল-চেয়ার পেতে দরবারে আসা মানুষের কথা শুনছেন ওসি আশিকুর রহমান।
ভেলাজান গ্রামের জহুরাতুন নেছা (৫৭) বলেন, আমার একটা মামলা আছে। কিন্তু পুলিশ আসামি ধরে না। তাই আজ ওসি স্যারের কাছে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আসেছি। ওসি স্যার বললেন, আসামি ধরতে পুলিশ পাঠাবেন তিনি। ওসির সঙ্গে কথা বলার পর তাৎক্ষণিক সমাধান পেয়ে বেশ খুশি তিনি।
জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের আহ্বায়ক মুহম্মদ শহীদ উজ জামান বলেন, জনগণকে থানামুখী করতে ওসি আশিকুরের ভাবনাটি অসাধারণ। এ সেবার মাধ্যমে পুলিশ জনতার মধ্যে যে দূরত্ব আছে, তা কমবে। এতে এলাকার অপরাধ বিষয়ে পুলিশ আরও তথ্য পাবে, যা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, পুলিশ সব সময় জনগণের পাশে থেকে কাজ করে। ওসি আশিকুরের এ উদ্যোগ পুলিশকে জনগণের আরো কাছাকাছি নিয়ে যেতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। তার এ উদ্যোগটি জেলার অন্য সব থানায় ছড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব