১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ২০:০২

নওগাঁয় সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁয় সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা

‘সময়মতো পানি দাও, সার দাও আরও কত ঝামেলা, তাই দুই বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ না করে সবজি চাষ করছি। এতে ঝামেলা কম, লাভও বেশি।’ কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁর সদর উপজেলার শালেবাজ গ্রামের চাষি আব্দুল মজিদ। শুধু মজিদই নন, বিগত কয়েক মৌসুম ধরে ধান চাষ করে লোকসান গোনার পর অনেক চাষিই এখন সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। 

নওগাঁ সদর, বদলগাছী, মান্দা, ধামইরহাট ও মহাদেবপুর উপজেলায় এ বছর ব্যাপকহারে সবজি চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে বাজারে প্রায় সব ধরণের সবজির দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজির আবাদ হয়েছে। গত বছর জেলায় সবজি আবাদ হয়েছিল ৭ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর নওগাঁয় সবজির আবাদ বেড়েছে ৮৪৫ হেক্টর জমিতে। জেলায় এ বছর আমন ধান আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে। যেখানে গত বছর আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নওগাঁর সদর উপজেলার বক্তারপুর, কীর্ত্তিপুর, তিলকপুর, বর্ষাইল ইউনিয়ন, বদলগাছীর বালুভরা, পাহাড়পুর, মিঠাপুর, বিলাশবাড়ি, কোলা, আধাইপুর ইউনিয়ন, মহাদেবপুরের সদর ইউনিয়ন, চেরাগপুর, রাইগা, চান্দাশ, উত্তরগ্রাম এলাকায় ধানের পাশাপাশি বিস্তৃর্ণ ব্যপাকহারে সবজির চাষ হয়েছে। এসব জমিতে ফুলকপি, বাধাকপি, করলা, মরিচ, বেগুন, টমোটো বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষ হচ্ছে। অথচ দুই-তিন বছর আগেও এসব জমিতে এত ব্যপকহারে সবজির চাষ হতো না। 

স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালের পর থেকে বোরো ও আমন ধান আবাদ করে ন্যায্যমূল্যে না পাওয়ায় কৃষকদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে। ধান আবাদ করে লাভের মুখ দেখতে গিয়ে উল্টো অনেক কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকেরা ধান চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এই লোকসান দেখে বাঁচতে অনেক কৃষক আস্তে আস্তে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক যারা সাধারণত নিজেরা শ্রম দিতে পারেন এমন কৃষক ধান চাষ ছেড়ে দিয়ে সবজি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।

বক্তারপুর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, তার চার বিঘা আবাদি জমে রয়েছে। সবজি চাষের জন্য এবার দেড় বিঘা জমিতে ধান করেননি তিনি। ওই দেড় বিঘা জমিতে তিনি শীতের আগাম শিম ও ফুলকপি চাষ করেছেন। অথচ বিগত বছরগুলোতে শহিদুল তার চার বিঘা জমিতে ধান আবাদ করতেন। 

শহিদুল বলেন, বাজারে এখন নতুন ধানের দাম সর্বোচ্চ ৭১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আড়াই বিঘা জমিতে খুব বেশি হলে ৫০ ধান পাওয়া যাবে। ৫০ ধান বিক্রি করে আসবে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ দেড় বিঘা জমিতে লাগানো শিম ও ফুল কপি বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা এসেছে। এই সবজি খেতে আরও দুই-তিন মাস থাকবে। সদর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের মিল্টর সরদার বলেন, ধান চাষের চেয়ে সবজি চাষে খরচ কম, অথচ সে তুলনায় লাভ বেশি। ধানের দাম না পাওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক ধান আবাদ ছেড়ে দিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকছে। ন্যায্যমূল্য না পেলে ধীরে ধীরে ধানের আবাদ আরও কমবে। 

পাহাড়পুর গ্রামের খবির উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর আমি বেশি জমিতে সবজি আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে আমার খেতের ফুলকপি, বাধাকপি ও পালংশাক উঠা শুরু করেছে। বাজারে দামও ভালো।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল ইসলাম বলেন, নওগাঁ সদর উপজেলার মাটি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বিশেষ করে বর্ষাইল, বক্তবার, তিলকপুর ও কীর্ত্তিপুর এলাকায় ব্যাপকহারে সবজি চাষ হচ্ছে এবং বছর বছর সবজি চাষ বাড়ছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সবজির আবাদ বাড়ার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। গত কয়েক মৌসুম ধরে ধানের দামটা অস্বাভাবিক কম ছিল, এজন্য কৃষকেরা সবজির দিকে বেশি ঝুঁকছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের কম খরচে অধিক লাভ এমন ফসল আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর