চলতি মৌসুমের শুরুতে নওগাঁর বিভিন্ন হাট-বাজারে ধানের দাম ছিল বেশ ভালো। কিন্তু বাজারে আমনের সরবরাহ বাড়তে থাকায় পাল্টে যায় বাজারের চিত্র। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁর বিভিন্ন হাট-বাজারে নতুন ধানের দাম প্রতি মণে কমেছে ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত। চালের দাম অপরিবর্তিত অথচ ধানের দাম কম হওয়ায় চরম হতাশ হয়ে পড়েছে নওগাঁর কৃষক।
এদিকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে জেলায় ১৯ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন ধান কেনার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। জেলার মান্দা, নিয়ামতপুর, বদলগাছী, রানীনগর ও ধামইরহাট উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হলেও এখনও ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি। এছাড়া অধিকাংশ ইউনিয়নে কৃষকদের কাছ থেকে তালিকা না পাওয়ায় লটারি করা সম্ভব হয়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৬৭৪ মেট্রিক টন।
নওগাঁ জেলার অন্যতম বৃহৎ ধানের বাজার মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজিহাটের আড়তদার ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারটিতে প্রতি মণ মোটা জাতের গুটি স্বর্ণা, স্বর্ণা-৫ ও স্বর্ণা-৫১ (হাইব্রিড স্বর্ণা) ধান মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬১০ টাকায়। মাঝারি জাতের জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬২০ থেকে ৬৩০ টাকায় এবং সরু জাতের শম্পা কাটারি ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকায়।
মান্দা উপজেলার গনেশপুর গ্রামের কৃষক কাজী আবুল কাসেম সতীহাট বাজারে এসেছিলেন ধান বিক্রি করতে। ধান বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেই কথা আর বুলিসনা বা। ৬ মণ গুটি স্বর্ণার ধান বেচনু ৬০০ ট্যাকা দরে। সেই টাকাও আবার বাকি। আজকার বারে দিবে। এখন হামি বাজার-সদা করমু কি দিয়া। এই রকম দাম হলে ধান করা কি করমো।’ পত্নীতলা উপজেলার জামগ্রামের কৃষক নুরুজ্জামানও ধান নিয়ে একই রকম হতাশা প্রকাশ করেছেন।
মহাদেবপুর উপজেলার চকগৌরীহাটের মেসার্স রাসেল চাউল কলের স্বত্ত্বাধিকারী মোজাহার হোসেন বলেন, বর্তমানে বাজারে ধানের দাম পড়তি। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ ধানের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। নতুন ধান ওঠার শুরুতে স্বর্ণা ধান ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন সেই ধান ৬০০ থেকে ৬১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরু জাতের কিছু ধানের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠেছিল। কিন্তু সেই ধানও দাম কমতে কমতে ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘চালকল মালিকরা চাল বিক্রি করে টাকা পেলে সেই টাকা দিয়েই আবার ধান ক্রয় করে থাকে। কিন্তু এই মুহূর্তে মোকামে চাল বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে। উৎপাদিত চাল বিক্রি করতে না পারায় চালকল মালিকরা ধান কিনতে পারছেন না। এজন্য বাজারে ধানের দাম কমে গেছে। তবে সরকার কৃষকদের স্বার্থে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সংগ্রহ অভিযান শুরু হলে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়বে এবং ধানের দাম বাড়বে।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোলাম ফারুক পাটোয়ারি বলেন, ‘নওগাঁ সদর উপজেলায় কৃষকের অ্যাপসের মাধ্যমে এবং অন্য ১০টি উপজেলায় লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে ধান সংগ্রহ করা হবে। প্রশাসনের কাছ থেকে তালিকা না পাওয়ায় ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জেলার সকল ইউনিয়নে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করা যাবে।’
বিডি-প্রতিদিন/শফিক