কক্সবাজারের টেকনাফের তালিকাভুক্ত অর্ধশতাধিক মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন। মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় আত্মসমর্পণ করবেন তারা। আগামী ২৯ জানুয়ারি সকালে টেকনাফ সরকারি কলেজ মাঠে দ্বিতীয় দফায় এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে।
অনুষ্ঠানে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের শীর্ষ ১০২ মাদক কারবারি এক অনুষ্ঠানে শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় সাড়ে তিন লাখ পিস ইয়াবা, দেশীয় ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৭০ রাউন্ড গুলি প্রতীকীভাবে তারা সমর্পণ করেন। এই ১০২ জন ইয়াবা কারবারির মধ্যে একজন কারাগারেই মারা যান। বাকি ১০১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফায় বেশ কিছু ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ করানোর ব্যাপারে তিনি পাঁচ মাস ধরে কাজ করছেন। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে প্রয়োজনীয় সম্মতি দেওয়ার পর স্বেচ্ছায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ইচ্ছুক ইয়াবা কারবারিদের তালিকা তৈরি করা হয়।
এদিকে টেকনাফে ইয়াবা রোধে কঠোর তৎপরতার মুখে মাদক কারবারিরা রুট পরিবর্তন করছে। আগের তুলনায় ইয়াবা ব্যবসাও অনেক কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইয়াবা কারবারে জড়িত মিয়ানমারের নাগরিকরা নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারাই মিয়ানমার থেকে সরাসরি সমুদ্রপথে ও অন্যান্য রুটে ইয়াবা কক্সবাজার, মহেশখালী, চট্টগ্রাম, পতেঙ্গা, আনোয়ারা, কুমিল্লা, সিলেট, কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযানে ইয়াবাসহ প্রায়ই ধরা পড়ছে রোহিঙ্গারা। এ ছাড়া ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হচ্ছে মাদক কারবারি রোহিঙ্গারাও।
চলতি মাসের ২৩ দিনে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাত মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন রোহিঙ্গা। এর আগে ২০১৮ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান বিশেষ অভিযানে ইয়াবা কারবারি, ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ৫৬ রোহিঙ্গাসহ ২০৯ ইয়াবা কারবারি ও ডাকাত-সন্ত্রাসী নিহত হয়। গত এক বছরে এক কোটি ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ৫৭০ পিস ইয়াবাসহ দুই হাজার ৩৩৮ জনকে আটক এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান থাকায় ইয়াবা কারবার অনেকটাই কমে এসেছে। যারা আত্মসমর্পণ করেনি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে। তবে একই সঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, না হলে পুরোপুরি মাদক বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন