সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক রাশিদ আহমেদ তালুকদারের বিরুদ্ধে। তিনি ওই কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক।
সোমাবার দুপুরে ছাত্রীদের ফেসবুকে অভিযুক্ত শিক্ষকের পাঠানো বিভিন্ন স্ক্রিনশর্ট ভাইরাল হয়। বিষয়টি ছাত্র-অভিভাবকদের নজরে আসলে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এলাকাবাসী।
পরে সকলের উপস্থিতিতে কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এক ছাত্রী। এসময় এলাকাবাসী অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার সত্যতা মিলে। পরে তিনি হাত জোর করে ক্ষমা চান।
অভিযোগে জানা যায়, কবিতা শোনানোর কথা বলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি মোবাইল নম্বর চেয়ে বেড়ান। মোবাইল নম্বর না দিলে কলেজে এসে পরীক্ষা দেয়ার হুমকি দেয়া, হীনমন্যতাসহ বাংলা বিভাগ এবং প্রতিষ্ঠানকে গালি দেন তিনি।
অভিযুক্ত শিক্ষক বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের ফেসবুক রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে কবিতার বই বিক্রি করে দেয়ার নাম করে প্রথমে সখ্যতা গড়ার চেষ্টা করেন। এরপর প্রোফাইলে মহিলা কলেজের শিক্ষক দেখে অনেকেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট গ্রহণ করেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ঘটনা ছয় মাস ধরে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর। একজন এর প্রতিবাদ করায় একে একে বেরিয়ে আসে অন্যদের ইনবক্সের নানা কনভারসেশন। এরপর ময়মনসিংহ কেবি কলেজেও একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় শিক্ষার্থীদের কাছে।
অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার প্রেক্ষিতে কলেজের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষকের পরীক্ষার ডিউটি আপাতত বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে ছাত্র-অভিভাবকরা কলেজ ত্যাগ করেন।
এদিকে, নারীদের উচ্চশিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান কলেজটি সেটিতে এমন ধরনের শিক্ষককে দেখে ক্ষুব্ধ হন অভিভাবক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ। মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাহেজা বেগম কলেজে উপস্থিত হয়ে এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে নেত্রকোনার সুনাম রাখতে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
কলেজের উপাধ্যক্ষ কাজী ফারুক বলেন, একটি মেয়ের অভিযোগ থাকলে একটা কথা ছিল। তাছাড়া আমাদের মেয়েরা এখনো একটা দুইটা সমস্যা নিয়েও কিছু বলে না একাধিক সমস্যা না হওয়া পর্যন্ত। এমন একাধিক মেয়ের সঙ্গে একই রকম আচরণ বারবার করে আসছে। তার এমন অপরাধের জন্য ব্যাবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম জানান, যেহেতু মেয়েদের পরীক্ষার কথা হুমকি দেয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সেহেতু এই মুহূর্ত থেকে তাকে পরীক্ষার হল পরিদর্শক হিসেবে স্থগিত রাখা হলো। পরীক্ষায় সে ডিউটি করবে না। তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেন, ফেসবুকে ছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকতেই পারে। আজকাল ব্যাপার না। মেসেঞ্জারে কথায় কারো খারাপ লেগে থাকলে ক্ষমা চাই।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত