২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১৪:৫৭

হাসপাতাল আছে, চিকিৎসা নেই

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

হাসপাতাল আছে, চিকিৎসা নেই

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিতে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু উদ্বোধনের বছর পেরিয়ে গেলেও মিলছে না স্বাস্থ্য সেবা। চিকিৎসা সেবা দিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও আসেনি। চিকিৎসকসহ লোকবলও নিয়োগ করা হয়নি। ফলে এই হাসপাতালটি অনেকটা অকেজো এবং অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

জানা গেছে, জেলা সদর থেকে আলাদা হয়ে ২০১০ সালের আগস্ট মাসে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করে নবগঠিত বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ। ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষের বাস। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটি নির্মাণের আগ পর্যন্ত উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের চারটি কক্ষে বহির্বিভাগ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।

২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি চম্পকনগরে তিন একর জায়গা নিয়ে ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চারতলা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন ও চিকিৎসকদের জন্য কোয়ার্টার নির্মাণে ব্যয় হয় ২৫ কোটি টাকা। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে শিশু, মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডসহ কেবিন এবং তিনটি অস্ত্রোপচার কক্ষ রয়েছে। প্রয়োজনীয় লোকবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে রোগীদের পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য সেবা চালু করা যাচ্ছে না। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২০টি শয্যা ও কিছু আসবাবপত্র এসেছে। চিকিৎসার যন্ত্রপাতি না আসায় সেগুলোও তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে স্টোর রুমে।

রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অস্থায়ীভাবে পাঁচজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রোগীদের টিকিট ফি’র টাকা থেকে তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। আর সর্দি-কাশি ও জ্বর রোগের চিকিৎসা দিতে বিভিন্ন ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে আটজন চিকিৎসক আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরে চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় লোকবলসহ ৮২টি পদে জনবল নিয়োগের চাহিদাপত্র দেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়। মাত্র ৪৬টি পদের অনুমোদন দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারি ৪৬টি পদের বেতনস্কেল নির্ধারণ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ। এখনও নিয়োগ প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি।

বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্থায়ী ভিত্তিতে ওষুধ বিতরণের কাজ করা ইকবাল হোসেন জানান, আমরা অস্থায়ী ভিত্তিতে পাঁচজন কাজ করছি। এর মধ্যে আমি ওষুধ বিতরণ, আরেকজন টিকিট কাউন্টারে, দুইজন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং একজন চিকিৎসকের সঙ্গে থাকেন। শুধু ছোট-খাটো রোগের ওষুধ বিতরণ ছাড়া কিছুই হয় না এ হাসপাতালে। বেতনও দুই-তিন মাস পরপর দেয়া হয়।

চম্পকনগর গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, চিকিৎসার জন্য আমাদের জেলা সদরেই যেতে হচ্ছে। সর্দি-কাশির মতো রোগের ওষুধ দেয়ার জন্য তো আর হাসপাতাল হয়নি।

মির্জাপুর গ্রামের হামিদ মিয়া জানান, এখনও শহরের হাসপাতালে গিয়েই চিকিৎসা নিতে হয়। সবার তো আর শহরে যাওয়ার সক্ষমতা নেই।

বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হামিদা মোস্তফা জানান, আমার পোস্টিং চম্পকনগর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক নিয়োগ হয়নি তাই এখানে রোগীদের সেবা দিতে বলা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন ডা. শাহ আলম বলেন, সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় জনবল পদায়ন না হওয়া এবং যন্ত্রপাতির অভাবে রোগীদের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। আশা করছি, অচিরেই এসব সমস্যা সমাধান করে রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর