২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১৩:০৩

টাঙ্গাইলের পৌলি নদীতে বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে দুই সেতু

মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের পৌলি নদীতে বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে দুই সেতু

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভাধীন মহেলা এলাকায় পৌলী নদীতে ৪টি পয়েন্টে ৭টি ভেকু বসিয়ে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন ও বিক্রির মহোৎসব চলছে। এতে করে চরম হুমকির মুখে পড়েছে নদীর উপর নির্মিত রেলসেতু ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের পুংলি সেতু।

অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের ফলে সেতুর দুইপাশ থেকে মাটি ধসে গিয়ে বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় দুইবছর আগে রেলসেতুর দু’পাশের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ঢাকার সাথে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হন হাজার হাজার মানুষ। ভেকু বসিয়ে মাটি কাটার কারণে ইতিপূর্বে দুইবার তিতাস গ্যাসের মূল পাইপলাইন ফেটে ভেসে উঠে। এতে টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল। ওই সময় নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করায়, বেশ কিছুদিন বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ থাকে। পরে পাইপলাইন মেরামত করা হলে পুনরায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি শুরু করে প্রভাবশালীরা।
এদিকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। ইতোপূর্বে ভাঙনে শতাধিক পরিবারের ভিটেবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি ও ফসলি জমি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা মহেলা এলাকায় পৌলী নদীতে ৪টি পয়েন্টে ৭টি ভেকু বসিয়ে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন ও বিক্রির মহোৎসব চলছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মহাসড়ক ও রেলসেতুর অদূরে ভেকু বসিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। অসংখ্য ট্রাক ভর্তি মাটি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইড রক্ষা বাঁধটিও রয়েছে হুমকির মুখে। ভেকু বসিয়ে মাটি কাটার ফলে গ্যাসপাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে বালু উত্তোলনকারীদের কয়েকজনের সাথে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ২নং ঘাট পরিচালনাকারীদের একজন ওই এলাকার মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে একাব্বর হোসেন ও আবদুল কাদের।  তারা বলেন, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা চলছে। এ ব্যবসার কারণে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জানা যায়  ১ নং ঘাট কালিহাতী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান, যুবলীগ নেতা হাবিল, কাবিল ও নুরুল তাদের লোক দ্বারা পরিচালনা করে। ৩ নং ঘাট পরিচালনা করেন কালিহাতীর মৃত ক্ষুদ্র মিয়ার ছেলে মো. ফজল, সালাম মিয়ার ছেলে মফিজুল, হাফিজুর এর ছেলে রমজান আলীসহ অন্যান্য লোকজন। ৪ নং ঘাট পরিচালনা করেন ইন্তা মিয়ার ছেলে শামসুল হক খেপু, হায়দার, আফসের ও আদর আলীও তার লোকজন।

এলাকাবাসী জানান, প্রভাবশালী লোকজন অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে সরকারি স্থাপনাসহ এই জনপদ ধ্বংস হয়ে যাবে। এলাকাবাসী আরও জানান, বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বালু ব্যবসায়ীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। এতে যে কোন সময় সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, কালিহাতী উপজেলার ইউএনও ও এসিল্যান্ড বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিবেন জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না।  অতি দ্রুত এ ব্যাপারে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কে কম প্রভাবশালী, কে বেশি সেটা আমরা বিবেচনা করি না। আমরা বিবেচনা করি সে অপরাধ করেছে কি না কিংবা বেআইনি কাজ করেছে কি না। প্রভাবশালী যেই হোক অপরাধ করে থাকলে আইনের দৃষ্টিতে ব্যবস্থা নেব আমরা। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, রেল ও মহাসড়কের পাশাপাশি দুইটি বড় সেতু থাকায় এলাকাটিকে স্পর্শকাতর ও বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ কারণে এলাকাটি বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতারও বাইরে রাখা হয়েছে। এখানে বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। বালু উত্তোলনে বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হবে।

এ ব্যাপারে কালিহাতী উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান বলেন, এর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পৌলী নদীর অবৈধ মাটি উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী মহাসড়ক ব্রিজ ও রেল সেতু রক্ষায়  এ ব্যাপারে দ্রুত জেলা প্রশাসন'সহ সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর