‘যদি এ গল্পে হারিয়ে যাই, দুঃখ নেই, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময়। যদি বেঁচে ফিরি নামবো রাজ পথে, দেখা হবে কৃষ্ণচূড়ায়, ব্রহ্মপুত্রের কল্লোলে। চা খানা আর মাঠে ময়দানে, কথা হবে গানে গানে, নাটকে, হৃদয়ে অন্তরীক্ষে। দেখা হবে কি আর মহামারীর পরে, যদি না হয় দেখা রেখো আমায় অন্তরে।’
শেখ খায়রুল ইসলাম ঈষাণের শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে দেয়া ফেসবুক স্ট্যোটাসের শেষের প্যারা এটি। এমন আবেগঘন স্ট্যাটাসের কারণ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে জানানো হয়েছে তার করোনা পজেটিভ। এর পরপরই ময়মনসিংহের সব অঙ্গনে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। কারণ, তরুণ এই স্বেচ্ছাসেবক কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ থেকে ময়মনসিংহ নগরীর মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হয়েছেন। শবে বরাতের রাত থেকেই তার শরীরে জ্বর অনুভূত হয়, সেই সাথে ব্যথাও। এরপর অনেকটা নিজের তাগিদেই পরীক্ষা করানো। ফলাফল করোনার নির্মম থাবা। এরপরও দৃঢ় প্রত্যয়ী ঈষাণ।
ঘরে বসেই যোগাযোগ করছেন অনেকের সাথে। সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছেন আরো সচেতন হবার। শুক্রবার সকালে যখন ম্যাসেঞ্জারে বার্তা চালাচালি হচ্ছিল তখন জানতে চেয়েছিলাম, আপনি তো সব সময় সেফটি নিয়ে ঘুরেছেন। এরপরও এমন হলো কেনো? প্রতি উত্তর, বলতে পারছিনা, কোথা থেকে কী হলো!
তবে এই যোদ্ধার এমন সংবাদে স্থির থাকতে পারেননি সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানসহ রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষ। সবার ওয়াল জুড়েই শোভা পাচ্ছে ঈষাণের ছবি। প্রার্থনা, ঈষাণ সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসুক।
মেয়র লিখেছেন, ‘আমাদের সকলের প্রিয় ঈশান। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছো। এই ভাইরাসটি আজকে তোমার দরজায় নাড়া দিয়েছে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা রেখে, মনোবল দৃঢ় রেখো, কায়মনোবাক্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে কামনা করি, তুমি যেমন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করেছো, ঠিক তেমনি তোমার মুখে বিজয়ের হাসির মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ নতুন স্বপ্নের জয় হবেই। মহান আল্লাহ পাক স্নেহধন্য ঈশানসহ সকলকে হেফাজত করুন।’
জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শেখ ঈশানের ভাবনা তৈরি হয় কীভাবে এই ভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত রাখা যায়, ছিন্নমূল মানুষের দিকে সেবার হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায়। এমন ভাবনা থেকেই গত ২৮ মার্চ পরিচিতদের নিয়ে ‘তারুণ্যের দল’ নামে ১০ সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন তিনি। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় জীবাণুনাশক স্প্রে করার মেশিন, পিপিই, হ্যান্ডগ্লাভস ও মাস্ক জোগাড় করেন। তখন থেকেই শুরু। প্রতিদিন কাঁধে জীবাণুনাশকের ড্রাম নিয়ে নেমে পড়তেন করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে।
ঘুরে ঘুরে সড়ক, বাসাবাড়ি, অফিস, মসজিদ, মন্দির, সড়কে চলমান গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতো শেখ ঈশানের তারুণ্যের দল। সুরক্ষা সরঞ্জাম দেয়াসহ সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশেও দাঁড়ায় তারা। দ্রুতই তার কর্যক্রম নজর কাড়ে শহরবাসীর।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, আশা করছি তার কিছুই হবেনা। সে ঢাকা যাবার চেষ্টা করছে। তার সংগঠন থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে শুনেছি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল