৩০ মে, ২০২০ ১২:৩৫

মানবতায় দৃষ্টান্ত স্থাপন নরসিংদী জেলা প্রশাসনের কুইক রেসপন্স টিমের

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

মানবতায় দৃষ্টান্ত স্থাপন নরসিংদী জেলা প্রশাসনের কুইক রেসপন্স টিমের

কখনো করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যাক্তিদের দাফন বা সৎকার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন, আবার কখনো মানুষের ভয়কে জয় করতে ছুটছেন। আবার কখনো খাবার নিয়ে ছুটছেন অসহায়, দুস্থ, নিম্ন কিংবা মধ্যবিত্তদের বাড়ি বাড়ি। আবার কখনো লকডাউন নিশ্চিত করতে পথে প্রান্তরে ছুটছেন। কখনো অসাধু ব্যবসায়ীদের কবল থেকে মানুষকে রক্ষায় বাজার মনিটরিং বা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসাচ্ছেন। গুজব রুখতে নজর দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নরসিংদী জেলার ২২ লক্ষ মানুষকে সুস্থ রাখতে হবে। তাই সর্ব সাধারণকে সুস্থ রাখতে, তাদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে দিন রাত জেলা জুড়ে চলাচ্ছেন সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন। গত দুই মাস ধরে করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবেলায় এই ভাবেই চলছে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের ৩৪ তম বিসিএস ক্যাডার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ আলম মিয়া’র নিত্য নৈমিত্যিক কর্মকাণ্ড।

সকল কিছুকে ছাপিয়ে সর্বশেষ করোনায় মৃত ব্যক্তি বা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ১১ ব্যক্তির দাফন বা সৎকার করে প্রশাসনের এই কর্মকর্তা জেলা জুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়ায় সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এখন ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ কোভিড-১৯ ভাইরাসের মহামারীর আতঙ্কে মানুষ আজ ঘর বন্দী। একটু অসাবধানতায় জীবন পড়তে পারে চরম বিপর্যয়ের মুখে। এমনকি জীবন প্রদীপও নিভে যেতে পারে। ঠিক এমন সময় গর্ভবতী স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাকে ঘরে রেখে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য দিনরাত নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ও করোনা প্রতিরোধ সেল নরসিংদী সদর উপজেলার কুইক রেসপন্স টিমের আহবায়ক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ আলম মিয়া। সবকিছু ছাপিয়ে তার মানবিক গুণ ও কর্মদক্ষতায় তিনি নরসিংদীতে সবার মাঝে হয়ে উঠেছেন একজন “বাস্তব জীবনের সুপার হিরো”।

জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা প্রশাসনে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ আলম মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আদর্শের প্রতি আমার দূর্বলতা রয়েছে। তার ইচ্ছা জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলা। আর এ নির্দেশনাটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছেন নরসিংদীর মান্যবর জনবান্ধব জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমার মাতৃতুল্য অভিভাবক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। যেকোন পরিস্থিতিতে দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজ করার মতো করে তিনি আমাকে নিজে হাতে তৈরী করেছেন। আমাকে হাতে কলমে কাজ শিখিয়েছেন, মানবিক হতে সাহস যুগিয়েছেন, পরিশ্রমী হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সেই প্রেরনা থেকেই আমি দিন রাত কাজ করে চলেছি।

২০১৬ সালে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নরসিংদীতে যোগদান করেন এই গুণী কর্মকর্তা। এরপর থেকে তিনি নিজেকে উজাড় করে নরসিংদীর মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। জেলার সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষের সাথে সমানতালে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সততার সাথে তিনি তার দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন করে চলেছেন। এই ভয়াবহ মহামারীতে সাধারণ মানুষকে ঘরে ফেরানোর কার্যক্রম থেকে শুরু করে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত, ভেজাল বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুস্থ ও অসহায়দের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, ‘করোনা’ উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ, আক্রান্ত রোগীর বাড়ী লকডাউন, হাসপাতালে নেয়া, খাওয়া-দাওয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তার সৎকার সম্পন্ন করা, কখনো কৃষকের মাঠে ধান কেটে দেওয়া, কখনো মাস্ক, সেনিটাইজার বিতরণসহ তিনি সবই করে চলেছেন সিদ্ধহস্তে। দায়িত্ববোধ আর মানবিকতার তাড়নায় তিনি দিনরাত অবিরাম ছুটে চলেছেন নরসিংদীর প্রান্তিক জনপদের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সবমিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন নরসিংদীর মানুষের বিশ্বস্ততা ও ভরসার প্রতীক। ভয়কে জয় করে পরম মমতায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিত্যদিনের চিকিৎসা, খাওয়া-দাওয়া, প্রতিবেশীদের অবহেলা ও দুর্ব্যবহার থেকে রক্ষাসহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করছেন তিনি। 

তিনি করোনা রোগীদের সংস্পর্শেই বেশিরভাগ সময় থাকেন। তাই তিনি নিজের থাকার রুম থেকে শুরু করে খাবার দাবারের জিনিসপত্র, কাপড়-চোপড় সবই আলাদা করে নিয়েছেন। নরসিংদীর জনপদের মানুষকে নিরাপদ রাখতে তিনি নিজের ভোগবিলাসকে উৎসর্গ করে পরিবার থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখছেন। জানতে চাইলে গুণী এই কর্মকর্তার সহধর্মীনি জানান, সংকট সারা জীবন থাকবে না। তার সেবায় জেলার ২২ লক্ষ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। এই সংকটময় সময়ে সে নরসিংদীর লাখো মানুষের পাশে থেকে সেবা দিতে পারছে, এর চেয়ে খুশির আর কিছুই নেই। তার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। তিনি যেন এইভাবেই প্রশাসনে থেকে প্রান্তিক মানুষকে সেবা দিতে পারে।  

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর