চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। খোলা বাজারে ধান-চালের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক ও মিল মালিকরা সাড়া দেয়নি। অনেক কৃষক সরকারি গুদামে ধান না দিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করেছে। আর চালের দাম বেশি হওয়ায় লোকসানের শঙ্কায় মিলাররাও চাল দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন।
তবে যে সমস্ত মিল মালিক স্বল্প পরিমাণ চাল দিয়েছেন তারা বলছেন, কেজি প্রতি কমপক্ষে চার টাকা লোকসান হয়েছে। আর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ায় দুর্যোগ মুহূর্তে জেলায় খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা থাকবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলায় চলতি বছর বোরো ধান ২৫ হাজার ৮৯০ মেট্রিকটন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও মাত্র ৭ হাজার ৯৩৯ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। সিদ্ধ চাল ২৩ হাজার ১২ মেট্রিকটন ধরা হলেও ১৬ হাজার ৯৭৫ মেট্রিকটন সংগ্রহ করা হয়েছে। আর আতপ চাল ৭১৪ মেট্রিকটন লক্ষ্যমাত্রা হলেও মাত্র ২৫৮ মেট্রিকটন সংগ্রহ করা হয়েছে।
উপজেলাভিত্তিক হিসাবে সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬১০ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ৭৫২ মেট্রিকটন সংগ্রহ করা হয়েছে। উল্লাপাড়া উপজেলায় ৫ হাজার ৫৯১ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ ধরা হলেও ১ হাজার ৩৬৯ মেট্রিকটন সংগ্রহ করা হয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলায় ৪ হাজার ২৩১ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও মাত্র ১ হাজার ৩০ মেট্রিকটন সংগ্রহ করা হয়েছে।
রায়গঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ৫৯৮ মেট্রিকটন ধান লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও মাত্র ৬৫৫ মেট্রিকটন সংগ্রহ করা হয়েছে। তাড়াশ উপজেলায় ৪ হাজার ১৮২ মেট্রিকটন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ১ হাজার ৫৬১ মেট্রিকটন সংগ্রহ করা হয়েছে। কাজিপুর উপজেলায় ২ হাজার ৪৩৫ মেট্রিকটন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও মাত্র ১ হাজার ৫৮৭ মেট্রিকটন সংগ্রহ করা হয়েছে। আর চৌহালী উপজেলায় ধান ৪৩২ মেট্রিকটন ও চাল ২১৭ মেট্রিকটন লক্ষ্যমাত্র ধরা হলেও কোনো ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়নি। তবে বেলকুচিতে ১ হাজার ৫৬১ মেট্রিকটন লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হয়েছে।
সলঙ্গা অঞ্চলের কৃষক হায়দার আলী ও মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। ধান তাদের চাহিদামতো শুকাতে হয়। আর্দ্রতা কমবেশী হলে ফেরত দেওয়া হয়। আবার চিটা থাকার অজুহাতে ফেরত দেওয়া হয়। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। আবার সিন্ডিকেটের খপ্পড়ে পড়তে হয়। আর খোলা বাজারে বিক্রি দাম একটু কম হলেও কোনো ঝামেলা নেই। এছাড়াও এবার খোলা বাজারে ধানের দাম ভালো না থাকায় সরকারি গুদামে ধান দিতে কৃষকরা আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
সিরাজগঞ্জ জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মোতালেব ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম আহমেদ জানান, বাজারের ধানের দাম চড়া হওয়ায় চালের দাম বেশি। মোটা চাল ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের ৩৬ টাকা রেটে চাল দিতে গেলে অন্তত ৪-৫ টাকা করে লোকসান হচ্ছে। এ কারণে অনেকেই চাল দেয়নি। তবে প্রথম দিকে ধানের দাম একটু কম থাকায় লোকসান দিয়েও লাইসেন্স রক্ষায় অনেক মিল মালিক চাল দিয়েছে।
চাল না দিলে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, যদি চুক্তি অনুযায়ী চাল দেওয়া হয়, তাহলে কেজি প্রতি চার টাকা করে লোকসান হবে, আর যদি না দেই তবে সরকার জামানত হিসেবে রাখা টাকা কাটলে কেজি প্রতি ২ টাকা করে লোকসান হবে। তাহলে দিলেও বেশি লোকসান আর না দিলে কম লোকসান। তাই অনেকে চাল দেয়নি।
তিনি জানান, সরকার সমন্বয় করে দাম বৃদ্ধি করলে কল মালিকরা উপকৃত হবে। নাহলে চালকল মালিকরা দেউলিয়া হয়ে যাবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহবুবুর রহমান খান জানান, চলতি বছর ধান প্রায় ৩১ শতাংশ, সিদ্ধ চাল ৭৪ শতাংশ ও আতপ চাল ৩৬ শতাংশ সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি জানান, কৃষক খোলা বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় সরকারি গুদামে ধান দেয়নি। আর ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দামও বেশি তাই। অনেক মিলার চাল দেয়নি। জেলার ৫৬৪ মিল মালিকের সাথে চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৮৯ মিল মালিক কোনো চাল দেয়নি। বাকিরা কিছু কিছু করে দিয়েছে। যেসব মিল মালিক চুক্তিভঙ্গ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই