জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নিজ জেলা নেত্রকোনায় ‘হিমুদের’ মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। তার ৭২তম জন্মদিন পালন করেছে হিমু-রূপারা। দিনটি উপলক্ষে হুমায়ূন ভক্তরা হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে শোভাযাত্রা, কেককাটাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গানের তালে তালে নেচে গেয়ে প্রতিবারের মতো এবারও হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু ও নীল শাড়িতে রূপা সেজে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন একদল তরুণ-তরুণী।
তারা হুমায়ূন আহমেদের সিনেমার গান বাজিয়ে সাতপাই হিমু পাঠক আড্ডার কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রাটি বের করেন। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মোক্তারপাড়া মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আলপনা বেগমের পরিচালনায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে শোভাযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার। এতে সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্র চর্চা কেন্দ্রের আহ্বায়ক শিক্ষাবিদ মতীন্দ্র সরকার।
পরবর্তীতে নান্দনিক শোভাযাত্রা শেষে মোক্তারপাড়া মুক্তমঞ্চে কেক কাটেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল, প্রেসক্লাব সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল, মডেল থানার ওসি মো তাজুল ইসলাম খান, লেখক স্বপন পাল, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অসিত ঘোষ, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান, আমাদের নেত্রকোনা পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, পর্যটন করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফাইজুল করিম, কবি শাম্মি খান, সোহরাব উদ্দিন আকন্দ, উদীচীর মোখলেছুর রহমান, নারায়ণ কর্মকার, সাস্কৃতিক কর্মী নাজনীন সুলতানা সুইটিসহ ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সের কথা সাহিত্যিক ‘হিমু-রূপারা’।
শোভাযাত্রায় শুধু তরুণ-তরুণীরাই নয়, এতে প্রতি বছরের মতো এবারও শিশু থেকে মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন স্তরের সামজিক ব্যক্তিত্বরা অংশ নেন।
সন্ধ্যা ৬ টায় লেখকের তৈরি নাটক-সিনেমার গান নিয়ে বাদ্য-বাজনায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে শিল্পকলা একাডেমীর নজরুল মঞ্চে। এতে নাচ-গান পরিবেশন করবেন সংগঠনের সদস্যসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা।
আয়োজকদের মধ্যে নতুন প্রজন্মের ভক্ত মেহের নিগার রোদসী জানান, হুমায়ূন আহমেদ এমন একজন লেখক যার বই পড়তে শুরু করলে আর বন্ধ করা যায় না। আমি ছোটবেলা থেকে উনার বই দেখে দেখে বড় হচ্ছি এবং বই পড়ার প্রতি আগ্রহ হয়েছে। আমরা যারা নতুন প্রজন্মের আছি তারা আমাদের এই খ্যাতিমান লেখককে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে সমাজে আলোকিত মানুষ তৈরি হবে। বই না পড়লে আলোকিত মানুষ হওয়া যাবে না। হুমায়ূন আহমেদ আমাদের নেত্রকোনার সন্তান হওয়ায় আমরা নিজেদের গর্বিত মনে করি। যে কারণে আমাদের আরও সমৃদ্ধ হতে হবে। উনাকে স্মরণের মধ্য দিয়েই সেটি সম্ভব। প্রতি বছর আমরা হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে এই দিবসকে আনন্দের সঙ্গে স্মরণ করে যাচ্ছি। এবার করোনার মহামারি থাকায় আমরা পথে পথে মাস্ক বিতরণ করেছি শোভাযাত্রায়। মানুষকে সচেতন করাও একটি পাঠ বলে মনে করি।
এদিকে জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় লেখকের জন্মস্থান নানার বাড়িতে ও পৈত্রিক ভিটা কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর লেখকের নিজ প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ