স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বাস্তব চিত্র মূল্যায়নে ঢাকায় এসেছে জাতিসংঘের এলডিসি-বিষয়ক দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রোনাল্ড মোলেরুসের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। তারা বাংলাদেশ সফরকালে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে। এসব বৈঠকের ফলাফলের ভিত্তিতে তারা বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপট ও প্রস্তুতি নিয়ে একটি স্বাধীন মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করবে।
গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘের এলডিসি-বিষয়ক দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রোনাল্ড মোলেরুস। এরআগে জাতিসংঘকে এলডিসি থেকে উত্তরণ বিষয়ে স্বাধীন মূল্যায়নের অনুরোধ জানায় অন্তবর্তী সরকার। ২৫ সেপ্টেম্বর ইআরডি সচিব জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও হাই রিপ্রেজেনটেটিভ রাবাব ফাতিমার কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠান। পরবর্তীতে ২ নভেম্বর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সেই চিঠির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এলডিসি-বিষয়ক দপ্তরের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে জানানো হয়। সফরকালে অংশীজনদের মতামত সংগ্রহ করে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল একটি স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরামর্শভিত্তিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, তিনটি মূল বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে এ মূল্যায়ন করা হবে- বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা; উত্তরণের সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণ; মসৃণ উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়ন।
জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্য হবে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। ২৪ আগস্ট এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, আইসিসি বাংলাদেশসহ ১৬টি ব্যবসায়ী সংগঠন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উত্তরণ ২০২৬ সাল থেকে পিছিয়ে ২০৩২ সাল করার দাবি জানায়। ব্যবসায়ীদের এ উদ্বেগ জাতিসংঘকে অবহিত করেছে সরকার। ২০১৮ সালে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং জলবায়ু-অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক অতিক্রম করে এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা পায় বাংলাদেশ। ২০২১ সালে দ্বিতীয় পর্যালোচনায়ও বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়। এরপর ২০২৬ সালে উত্তরণের সুপারিশ করে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের আশঙ্কা, এলডিসি থেকে বের হলে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর বড় বাজারগুলোতে ১২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ হতে পারে। এতে রপ্তানি আয় ৬ থেকে ১৪ শতাংশ কমে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।
পাশাপাশি ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্ব-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরও কঠোর হবে।