বেনাপোল কাস্টম হাউজে চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।এসময়ে লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৫০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ছিল। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ঘাটতি হয়েছে ৯৯৯ কোটি ৯ লাখ টাকা।
একই সমায়ে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে ৮টি সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স বাতিল ও তিন কাস্টমস কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বছর শেষে আরো বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ থাকায় কাস্টমসের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা মিডিয়ার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তবে গত অর্থ বছরে এই সময়ের চেয়ে রাজস্ব আদায় একুশ ভাগ বেশি বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে বেনাপোল কাস্টমে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
জানা যায়, গেল কয়েক বছর ধরে বেনাপোল বন্দরে ব্যাপক হারে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে যাওয়ায় কোনোভাবে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। কাস্টম ও বন্দরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছেন।
গত মাসেই শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে কাস্টমস কর্মকর্তারা ৮টি সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স বাতিল ও ৪ সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
এছাড়া কাস্টমের তিন রাজস্ব কর্মকর্তাকেও শুল্ক ফাঁকিতে সহযোগীতার অভিযোগে শাস্তিমূলক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাতে গোনা কয়েকজন ধরা পড়লেও অধিকাংশ দুর্নীতিবাজরা থাকছে ধরা-ছোয়ার বাইরে। ফলে কোনোভাবে রোধ হচ্ছে না শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি।
বাতিল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা হলেন-মেসাস রিমু এন্টার প্রাইজ, তালুকদার এন্টার প্রাইজ, এশিয়া এন্টার প্রাইজ, মাহিবি এন্টার প্রাইজ, সানি এন্টার ন্যাশনাল, মদিনা এন্টার প্রাইজ, মুক্তি এন্টার প্রাইজ ও রিয়াংকা এন্টার প্রাইজ।
রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বহিষ্কৃত কাস্টমস কর্মকর্তারা হলেন-রাজস্ব কর্মকর্তা নাশেদুল ইসলাম, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আশাদুল্লাাহ ও ইবনে নোমান।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, সব বন্দরে আমদানি পণ্যের ওপর রাজস্ব পরিশোধের নিয়ম এক হতে হবে। বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৩৮ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু এখানে সব সময় পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন।
তিনি আরও বলেন, জায়গার অভাবে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতীয় ট্রাক বন্দরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকছে। খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে মূল্যবান পণ্য সামগ্রী পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বৈধ সুবিধা পেলে এ বন্দর থেকে বর্তমানে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে, তখন তার দ্বিগুণ আয় হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই