সেন্টমার্টিনে পরিবেশ রক্ষায় ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটক নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করছে দ্বীপবাসী। ধর্মঘটের কবলে পড়ে দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটকরা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হয়েছে।
সেন্টমার্টিন সার্ভিস বোট মালিক সমিতির আয়োজনে রবিবার সকাল থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলে। ধর্মঘট চলাকালে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুট ট্রলার চলাচল বন্ধসহ দ্বীপের সব দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ইউএনওর অনুরোধে খাবার হোটেল খোলা রাখা হয়েছে। অন্যদিকে সকল ধরনের যানবাহনসহ দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে।
সার্ভিস বোট, স্পিডবোট, গামবোট, ইজিবাইক (টমটম), ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেল, দোকানপাট, বাজার কমিটি, হোটেল-কটেজ মালিক সমিতি ও কিছু স্থানীয় জনতা এই ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
এর আগে দ্বীপ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটকদের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে সেন্টমার্টিন জেটিঘাট থেকে বিএন ইসলামিক স্কুল এন্ড কলেজ পর্যন্ত সড়কের এক পাশে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। এ মানববন্ধনে শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। বক্তব্য রাখেন- ইউপির চেয়ারম্যান নুর আহমদ, সার্ভিস বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলম, স্পিড ও গামবোট মালিক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম, ইউপি সদস্য হাবিব খান, ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম প্রমূখ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন নেতারা জানায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা ১০ হাজার। জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন এলাকায় আরও ৪ হাজার মানুষ বসবাস করছেন দ্বীপটিতে। সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষের আয়-রোজগারের একমাত্র খাত হলো পর্যটন মৌসুম। বছরের চার মাস দ্বীপের মানুষজন পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে আয়-রোজগারের মাধ্যমে সংসার চালাচ্ছেন।
তারা আরও জানায়, কোস্টগার্ড কর্তৃক সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদিয়া যেতে মানা করার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনসহ স্থানীয় জনসাধারণ।
সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটক নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করছে দ্বীপবাসী। এখানে দ্বীপের বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ অংশ নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, আগামী তিনদিনের মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে বড় কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, সবার আগে দ্বীপকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত। সরকার আইনের কথা বললেও স্থানীয় প্রশাসন সেটি বাস্তবায়ন করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তার মতে, মানুষ অধিকার আদায়ের জন্য ধর্মঘট ডাকতে পারে, তাই বলে দ্বীপকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া যায় না। তার ভাষায়, যদি দ্বীপ না বাঁচে সেখানকার মানুষ যাবে কোথায়।
সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ডের স্টেশনের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আরিফুজ্জামান বলেন, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের অংশ ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটক নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে জন্য আমরা কাজ করছি।
উল্লেখ্য, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের অংশ ছেঁড়াদ্বীপে কিছু সামুদ্রিক প্রবাল জীবিত আছে। এই প্রবালগুলো সংরক্ষণের জন্য পর্যটকদের যাতায়ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ১২ অক্টোবর এক পরিপত্র জারি করার পর তা বাস্তবায়নে দায়িত্ব দেয় কোস্টগার্ডকে। এ ছাড়া পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সেন্টমার্টিনে ছয় ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশও দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল