দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে করোনাকালে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বাল্যবিয়ে। চিরিরবন্দরে ৫ শতাধিক বাল্যবিয়ে হয়েছে। শুধু বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েই ২০ জনের অধিক ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে।
পারিবরিক সহিংসতা প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে, যৌতুক প্রতিরোধ, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, ধর্ষণসহ হত্যা, জখম, অপহরণ ও উত্যক্তকরণ বন্ধে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, এনজিও নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করলেও না কারণে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে দারিদ্রতা, অশিক্ষা, মোবাইলের অপ-ব্যবহার, বাল্যপ্রেমে জড়িয়ে পড়া, পিতামাতার বোঝা মনে করা, পরীক্ষায় ফেল করা, অনৈতিক সম্পর্ক ও কুসংস্কারের কারণে বাল্যবিয়ে কৌশল পাল্টে হচ্ছেই এবং নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না।
করোনাকালীন সময়ে সকল ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়ের হিড়িক পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন বলে অনেকেই জানান।
উপজেলা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির সদস্য মোর্শেদুর রহমান জানান, মফস্বল শহর এলাকায় ১৩-১৭ বছর বয়সের শিশু-কিশোরীদের বাল্যবিয়ে হচ্ছে। আইন থাকলেও প্রয়োগে ঘাটতি থাকায় এসব শিশু কিশোরীদের জোর করে বিয়েতে রাজি করিয়ে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষেধ সত্ত্বেও নানা কৌশলে বাল্য বিয়ে পড়ানো হচ্ছে। বয়স কম হওয়ায় কাজিরা বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করায় ওই কিশোরীটি আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। নতুন পরিবেশে খাপ খায়াতে না পারায় কিছুদিন যেতে না যেতেই মানসিক, শারীরিক, যৌন নির্যাতন, যৌতুকের চাপের ফলে ছাড়াছড়ি হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে একটি সন্তান হওয়ার পর শরীর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যাওয়ায় স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হচ্ছে। সামাজিক সুনাম নষ্টের ভয়ে অনেকেই নির্যাতনের কথা গোপন রাখছে। বাল্যবিয়ে ও পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে সুনিদিষ্ট আইনি-বিধান থাকলেও অসচেতনতা, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা, দোষী ব্যক্তির লঘু শাস্তি, আশ্রয় বা নিরাপদ বাসস্থানের অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা থাকায় মামলা নিতে টাকার চাপ, মামলার তদন্ত খরচ মেটানো, ঠিকমত বিচার না পেয়ে হতাশ হয়ে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিচ্ছে।
নশরতপুর রহমানিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানায়, করোনাকালীন ৮-১০ জনের বিয়ে হয়ে গেছে এবং ঝরে পড়ার সংখ্যা বাড়তে পারে।
চিরিরবন্দর উপজেলার বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদুর রহমান জানান, করোনার সময়ে এই স্কুলের ২০ জনের অধিক ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। চিরিরবন্দর উপজেলায় ৩৯টি মাদ্রাসা, ৭৬টি স্কুল, ১২টি কলেজ এর প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই অবস্থা বিরাজ করছে। করোনার এই সময়ে ৫ শতাধিক বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে আমার ধারণা।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা