ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী) আসনের সংসদ সদস্য মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা অভিযোগ করেন, মনজুর হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলেন। উল্টো আওয়ামী লীগের শত্রু বলে বিবেচিত স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে পথ চলছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে ফাঁটল ধরাতে তিনি বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে চক্রান্ত করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় নেতারা এসব কথা বলেন। তারা সাংসদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানান।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আকরাম হোসেনের সভাপতিত্বে এতে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন দলের উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারাও। সরকারি এ জেড পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘মনজুর আওয়ামী লীগের লোক না। যদি আওয়ামী লীগের লোক হতেন, তাহলে গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে হারিয়ে দিতেন না। এখন সুসংগঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে তাদের নিয়ে চলা ফেরা করেন।’
প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আরও বলেন, ‘আমলা মনজুকে নেত্রী (শেখ হাসিনা) মনোনয়ন দিয়েছেন। আমাদের তো কিছু করার নেই। নেত্রী ভালো বুঝেই দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যে এতটা অপদার্থ তা যদি নেত্রী আগে জানতেন তাহলে তাকে মনোনয়ন দিতেন না। এখন যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, বাকি যে কয়দিন আছে এই বোঝা আমাদের টানতে হবে।’
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার বলেন, ‘নেত্রীর দেওয়া উপজলা আওয়ামী লীগের কমিটির ভিত শক্ত থাকলে এমপি কি করলো, আর না করলো তাতে আওয়ামী লীগের কিছু যায় আসে না। আমরা শেখ হাসিনার রাজনীতি করি। আমরা মনে করি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিই এ এলাকার এমপি।’
মনজুর হোসেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে এড়িয়ে চলেন অভিযোগ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইকবাল হাসান চুন্নু বলেন, ‘তিনি আমার এলাকার লোক তার বিরুদ্ধে বলা আমার ঠিক না তারপরেও আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে, দলের স্বার্থে বলতে হয়। আজ দুঃখ লাগে এমন একজনকে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত করেছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষও তার কাছে যেতে পারেন না। সাধারণ মানুষ তার সমালোচনা করে, আমরা কিছু বলতে পারি না। আমাদের কিছু বলার কোনো ভাষা নেই। কি বলব? তিনি যা শুরু করেছেন তা আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ’
বুড়াইচ ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির হোসেন বলেন, ‘এমপি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী চেনেন না। একদিন দেখা হলো তার সাথে। আমাকে একজন বুড়াইচ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন এমপির সাথে। তিনি পরিচয় শুনেই মুসকি হাসি দিয়ে ১০ হাত দূরে সরে গেলেন। একটা কথাও বললেন না। কথা বলবেন কী? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তো তার পছন্দ না। তিনি পছন্দ করেন আওয়ামী লীগ বিরোধী কয়েকজন নেতাকে। তিনি ছিলেন আমলা। এখনও সেই আমালাদের মতই ব্যবহার করেন। দলের নেতাকর্মীদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয় তা তিনি এখনও শেখেননি।’
সাংসদ মনজুর হোসেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন অভিযোগ করে টগরবন্দ ইউনিয়নের সভাপতি জালাল ফকির বলেন, ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত মূল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে তিনি বসলেন না। অথচ আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়া কয়েকজন নেতাকে নিয়ে দলের বিপক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি করে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।’
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌকির আহমেদ ডালিম বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তাকে অতিথি করার কথা শুনে এক বুক আশা বেঁধেছিলাম যে তিনি আমাদের মাঝে আসবেন। আমাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনবেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে তিনি যে কোন্দলের সৃষ্টি করেছেন আজ তা সমাধান করে উপজেলা আওয়ামী লীগকে একত্রিত করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু তিনি আসলেন না। আওয়ামী লীগকে ভাগ করার যে চক্রান্তে তিনি লিপ্ত হয়েছেন তাতেই তিনি অটল থাকলেন।’
তৌকির আরও বলেন, ‘তিনি যখন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তখন তাকে প্রধানমন্ত্রীর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বলে উপাধি দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বুঝি তিনি সেই উপাধি পাওয়ার যোগ্য না। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে দ্বিখণ্ডিত করতে তিনি যে কাজ করে যাচ্ছেন তা দেখে আজ তাকে শ্রেষ্ঠ কুলাঙ্গার না বলে পারলাম না।’
সভায় আরও বক্তৃতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল আলীম সুজা, উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এনায়েত হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ সোহেল রেজা বিপ্লব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ তালুকদার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ দেলোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সেলিম রেজা, গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোনায়েম খান, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা খান মইনুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়ায় জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঝর্ণা হাসান, মাইনুদ্দীন মানু, মহিলা সম্পাদক আইভি মাসুদ, সদস্য আবু নাঈমসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক