জঙ্গিবাদ, মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব, নারী ও শিশু নির্যাতন, শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, গুজব ও ৯৯৯-এর সেবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন করতে ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালাচ্ছে মাদারীপুর জেলা পুলিশ। প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে জেলার মসজিদগুলোয় পুলিশের পক্ষ থেকে এ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
ইতিমধ্যে গত দুই সপ্তাহে দুই শতাধিক মসজিদে একযোগে ভিন্ন রকম এই তৎপরতা চালিয়েছে পুলিশ। প্রতিটি মসজিদের দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে সচেতনতামূলক স্টিকার। এর ফলে জেলায় সমসাময়িক অপরাধের সংখ্যা কমে আসছে বলে দাবি পুলিশর।
শুক্রবার পুলিশ কর্মকর্তারা মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আপনাদের সন্তানদের সময় দিন। তারা কি করছে কোথায় যাচ্ছে, কাদের সাথে মেলামেশা করছে। বিষয়গুলো নজর দিন। সন্দেহ কিছু মনে হলেই পুলিশকে অবহিত করুণ।’
পুলিশ কর্মকর্তার আরও বলেন, ‘মাদক হচ্ছে বর্তমান সমাজের বড় হুমকি স্বরূপ। মাদকাসক্ত হওয়া থেকেই আসতে আসতে ছেলেরা পা রাখে অন্ধকার জগতে। তারা ইভটিজিং, ছিনতাই, খুন, জঙ্গিবাদের মতো বড় বড় অপরাধ জড়িয়ে পড়ে।’
মুসল্লিদের অনুরোধ করে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, আপনারা চাকরি, ব্যবসা বাণিজ্য যা কিছুই করুণ, সন্ধ্যার পরে বাহিরে চায়ের আড্ডা না দিয়ে নিজের পরিবারের সাথে সময় দিন। নিজের সন্তানের খেয়াল রাখুন। এতে যেমন অর্থের অপচয় কমে যাবে, আবার নিজের পরিবারের মধ্যে মায়া-মমতার বন্ধন দৃঢ় হবে।
জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের নির্দেশনায় মাদারীপুরের ৫টি থানায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা অংশ হিসেবে মসজিদগুলোয় প্রচারণা নেমেছে পুলিশ। প্রতিটি থানার দায়িত্বরত পরিদর্শক, উপপরিদর্শক, সহকারী উপপরিদর্শক ও বিট পুলিশের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা মসজিদে গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। তা ছাড়াও লোকজনকে সাইবার ক্রাইম ও জব সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে। যাতে তারা এ ধরণের অপরাধ শনাক্তসহ নিজেদের এ ধরণের অপরাধের সাথে যুক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়াও বর্তমানে পুলিশের আধুনিক সেবা ৯৯৯-এর ব্যবহার সম্পর্কেও অবগত করে যাচ্ছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) আব্দুল হান্নান বলেন, ‘পুলিশ সুপারের মোহাম্মদ মাহবুব হাসানের নেতৃত্বে আমরা পাঁচটি থানার ৬৭টি বিট কার্যালয়ের অধীনে ৬৭টি মসজিদসহ দুই শতাধিক মসজিদে বক্তব্য ও প্রচারণা চালায় পুলিশ সদস্যরা। বক্তব্যে সর্বপ্রকার পুলিশি সেবা যেমন মামলা, জিডি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, সকল প্রকার ভেরিফিকেশনের জন্য দালাল কিংবা পুলিশ সদস্যদের সাথে কোন প্রকার অর্থনৈতিক লেনদেন না করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়। একই সাথে সামাজিক সকল অপরাধ নির্মূলে পুলিশকে সহায়তা করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। মসজিদে মুসল্লিদের যোগাযোগের জন্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, বিট অফিসার, অফিসার ইনচার্জ, সার্কেল এএসপি, এডিশনাল এসপি এবং পুলিশ সুপারের মোবাইল নম্বর সরবরাহ করা হয় এবং মসজিদে দেয়ালে স্টিকার সাঁটানো হয়।
এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন সামাজিক বিষয় নিয়ে আমরা বর্তমানে মসজিদ ভিত্তিক প্রচারণার কাজ শুরু করেছি। পর্যাক্রমে আমরা এ কাজগুলো মন্দির, গীর্জা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাট-বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত করবো। আমরা সমাজের প্রতিটি নাগরিকের সহযোগিতা কামনা করছি।’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন