সন্তান অসুস্থ। চলছে কঠোর লকডাউন। সন্তানকে নিয়ে যেতে হবে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পথ অনেক দূর। আন্তঃজেলায় যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধ। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার টাকা নেই। নিরুপায় বাবা।
সন্তানকে কীভাবে হাসপাতালে নেবেন? দিশেহারা বাবা অবশেষে শনিবার সকাল ৬টার দিকে রিকশা চালিয়ে সন্তানকে নিয়ে বাসা থেকে বের হন। পথে নষ্ট হয়ে যায় রিকশাটি। বাধ্য হয়ে দুই-তিন কিলোমিটার রাস্তা রিকশাটা ঠেলে নিয়ে যান। তার এই অবস্থা দেখে তাকে সহয়তায় এগিয়ে আসেন একজন অটোচালক। এরপর বিকাল সোয়া ৩টার দিকে সন্তানকে নিয়ে রংপুরে পৌঁছান তিনি। শেষ হয় উৎকণ্ঠার ৯ ঘণ্টার।
১১০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ ছুটে চলা এই রিকশাচাল বাবার নাম তারেক ইসলাম। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ সালন্দর গ্রামের রামবাবুর গোডাউন এলাকার আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে।
তারেক ১২ বছর বয়সেই রিকশা প্যাডেল ঘুরিয়ে বাবার সংসারের বোঝা সামলানোর যুদ্ধ শুরু করেন। কিন্তু করোনার মহামারি শুরুর পর থেকে তার বাড়তি আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউন পরিস্থিতিতে ঠিকমতো রিকশা চালাতে না পেরে অসহনীয় কষ্ট নেমে এসেছে তার পরিবারে।
এখন শিশুটি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে (১৮ নং ওয়ার্ড) চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, সাত মাস বয়সী শিশু জান্নাত রক্ত পায়খানা করায় গত ১৩ এপ্রিল রাতে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসা দেওয়ার পর চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য জান্নাতকে রংপুরে নিতে বলেন। কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা না থাকায় দিশাহারা হয়ে পড়েন বাবা তারেক। চারদিন ধরে কোনো ব্যবস্থা করতে না পেরে অবশেষে নিজেই রিকশা চালিয়ে সন্তানকে নিয়ে আসেন রংপুরে।
তারেক গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল থেকে সন্তানকে নিয়ে বাসায় যাই। বাচ্চার কন্ডিশন দেখে আমি চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু লকডাউনোর কারণে আমার অবস্থা এতটাই খারাপ যে, কালকে কি খাব সেই টাকাও আমার কাছে নেই। এ অবস্থায় আমি কীভাবে বাচ্চাটাকে নিয়ে এত দূরের রাস্তা আসব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। অ্যাম্বুলেন্সের টাকা জোগাড় করতে না পারায় সন্তানকে বাঁচানোর জন্য রিকশা চালিয়ে রংপুরে আসি।
তিনি বলেন, সকাল ৬টার দিকে আল্লাহর নাম দিয়ে বাসা থেকে বের হই। রাস্তায় আসতে আসতে তারাগঞ্জের দিকে এসে রিকশায় সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছার জন্য বাধ্য হয়ে দুই-তিন কিলোমিটার রাস্তা রিকশাটা ঠেলে নিয়ে আসি। পরে এক অটোচালক বাচ্চার সমস্যার কথা জেনে আমাকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ এগিয়ে দিয়েছে। পথিমধ্যে আরেকটা গাড়ি আমাকে মেডিকেলে পৌঁছানোর জন্য সহযোগিতা করে। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে এসে পৌঁছেছি।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ