গাজীপুরের শ্রীপুরে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পেয়েছে ‘গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ’। আর এ কারণে উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছেন অনেকে। স্বাদ ও লাভ বেশি আর সাথী ফসল ও অসময়ে ফলনের কারণে কৃষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এ তরমুজ।
গত বছর পরীক্ষামূলক সফলতার পর উপজেলার মধ্য টেপিরবাড়ী গ্রামের আব্দুল হামিদ এবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে কাঙ্খিত সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে প্রতিদিন তার আবাদি জমি থেকে ভোক্তারা তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। একেকটি তরমুজের ওজন কমপক্ষে ৮০০ গ্রাম।
২০২০ সালে সর্বপ্রথম গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজের চাষ করেন বলে জানান কৃষক আব্দুল হামিদ। ইউটিউবে ভিডিও দেখে তিনি এ চাষে আগ্রহী হন। পরে স্থানীয় কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে কৃষির নিয়ম-কানুন রপ্ত করেন।
তিনি জানান, এ বছর ৩৫ শতক লিচু বাগানে গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজের চাষ করেন। একদিকে লিচুর ফলন অন্যদিকে তরমুজের আবাদ তাকে সফলতা এনে দিয়েছে। অনলাইনে অর্ডার করে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। পরে মাচা তৈরি, বেড স্থাপন ও ফুল থেকে তরমুজের আকার বের হওয়ার পর জাল ব্যাগ বেঁধে দেন। তিন মাসের মধ্যেই তিনি ফলন পেতে শুরু করেন। ৩৫ শতক জমিতে তরমুজ চাষে তার লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। ইতিমধ্যে তার কাছ থেকে প্রতিবেশী ছাড়াও দূরের কৃষকরা পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা নিতে আসছেন।
মঙ্গলবার কৃষকের জমি থেকে তরমুজ নিতে আসা রাশেদ আহমেদ বলেন, এক বন্ধুর কাছ থেকে খেয়ে তরমুজের স্বাদ পেয়েছেন। সাধারণ তরমুজ থেকে এর স্বাদ কিছুটা ভিন্ন। পরে তিনি নিজেই ১০ কেজি ক্রয় করেছেন।
অপর ক্রেতা সাইফুল আলম সুমন বলেন, সবার কাছেই তরমুজের স্বাদের কথা শুনেছি। তাই নিজে এবার ১৪ কেজি ক্রয় করেছি। স্বাদের লোভ সামলাতে না পেরে ক্রেতা নজরুল ইসলাম শেখও ৬ কেজি ক্রয় করেন।
দেলোয়ার হোসেন শেখ বলেন, শ্রীপুরের উঁচু জমির মাটি ধূসর ও লাল বর্ণের। সাধারণত লিচু ও কাঁঠালের ফলন এখানে ভাল হয়। ভিন্ন জাতের তরমুজের আশানুরূপ ফলন হবে এমনটি অবিশ্বাস্য ছিল। কৃষক আব্দুল হামিদ তা বিশ্বাসযোগ্য করে দেখিয়েছেন। আমরাও উৎসাহিত হয়েছি। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী বছর আমরাও তরমুজের চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লিচু বাগানে তরমুজ চাষ করে সাথী ফসলের প্রমাণ করেছেন কৃষক হামিদ। ভবিষ্যতে এলাকার অন্যান্য চাষিরা ভিন্ন জাতের এ তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুয়ীদ উল হাসান বলেন, এটি কৃষক হামিদের দ্বিতীয় চাষ। এ তরমুজটি গোল্ডেন ক্রাউন। এটি গায়ে হলুদ কিন্তু ভেতরে লাল। গতবার আশপাশের কৃষক ও এলাকাবাসীর মধ্যে চাহিদা থাকার কারণে এবারও আরেকটু বেশি পরিমাণে আবাদ করা হয়েছে। এটি আমাদের দেশে নতুন।
স্বাভাবিক মৌসুমে উৎপাদনের পাশাপাশি অফ সিজনেও চাষাবাদ করা যায়। তখন এর দাম বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে নতুন ভ্যারাইটির কারণে। যারা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এটি চাষ করতে চান তাদের জন্য কৃষি বিভাগ সকল ধরনের সহায়তা করবে। ভবিষ্যতে শ্রীপুরে এর চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই