বগুড়ায় নার্সারি ব্যবসা করে সফলতা পেয়েছেন কলেজ ছাত্রী তানজিম তারবিয়াত নিতু। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কলেজ বন্ধ হয়ে গেলে কিছু করার তাগিদ থেকে পরিবারের সহযোগিতায় তিনি প্রথমে ফুল চারা বিক্রি শুরু করেন। শুরুর পর এখন তিনি বগুড়া শহরের মাটিডালিতে রীতিমত ফুল, ফল, বনসাইসহ হরেক রকমের চারা নিয়ে শোরুম দিয়ে বসেছেন। শূণ্য দিয়ে শুরু হলেও তার নার্সারিতে এখন রয়েছে ২৭ লাখ টাকার চারা।
জানা যায়, বগুড়া শহরের মাটিডালি এলাকার ব্যবসায়ী আরিফুজ্জামান আরিফ ও নাজনিন আকতারের কন্যা তানজিম তারবিয়াত নিতু। নিতু বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ (কমার্স) শ্রেণীর ছাত্রী। তার একমাত্র ভাই রওশন আলী ৯ম শ্রেণীর ছাত্র। ব্যবসায়ি পরিবারের মেয়ে নিতু ছোট বেলা থেকেই স্বাধীনচেতা। ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা ভাইরাসের প্রভাবের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মত সেও ঘরবন্দি হয়ে যায়। ঘরে বসে লেখাপড়া করার পরেও তার প্রচুর সময় থাকতো। সে অবসর সময় তার কাছে থমকে দাঁড়াতো। নিতু কোন রকম প্রশিক্ষণ ছাড়ায় প্রথমে ফুলের চারা বিক্রি শুরু করেন। প্রথম দিকে ফুল চারা বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে কেনাবেচা করতে থাকেন। অনলাইনে কেনাবেচা শুরু করে দেখতে পান তাতে খরচ বেশি আয় কম। চাহিদা ও ভাল লাভের আশায় তিনি নিজেদের প্রায় ৫ বিঘা জমির অর্ধেক অংশে ফুল ও ফলের চারা উৎপাদন শুরু করেন। আর তার নার্সারি ব্যবসার নাম দেন ট্রি ওয়ার্ল্ড নার্সারি।
ফুলের পাশাপাশি, বিভিন্নজাতের ফল, ওষুধি, ক্যাকটাস, অকির্ড, মসলাজাতীয় চারা উৎপাদন শুরু করেন। তিন মাস পর নিজের নার্সারি থেকে তৈরীকৃত চারা ক্রেতাদের মাঝে বিক্রি শুরু করেন। বিক্রিতে সফলতা পেলে তিনি বগুড়া শহরের মাটিডালিতে ট্রি ওয়ার্ল্ড শোরুম খোলেন। ট্রি ওয়ার্ল্ড নার্সারির নির্বাহী পরিচালক হয়ে যান দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী তানজিম তারবিয়াত নিতু। গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে তার নার্সারি ব্যবসার প্রসার ঘটলে বগুড়া সদর উপজেলার মানিকচক এলাকায় তিনি বাবার সহযেগিতা নিয়ে ১৬ বিঘা জমি ক্রয় করেন। কৃষি জমি কিনে তিনি সেখানে বিভিন্নজাতের আমসহ বেশ কিছু ফুল ও ফলের চারা তৈরী শুরু করেছেন। জুলাই আগস্ট মাসে ফল চারা পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে।
নিতু জানান, শুরুতে এতটা চিন্তা না থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদার কারণে বগুড়া, সাভার, যশোরের ফুলগ্রাম থেকে কিছু কিছু ফুলের জাত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোকে বিভিন্ন উপায়ে চারা করা হয়েছে। করোনাকালে ঘরে বসে না থেকে পরিবারের সহযোগিতায় নার্সারি ব্যবসাটা শুরু করেন। নিজের গড়া নার্সারিতে এখন রয়েছে অর্ধশতাধিক জাতের ফুলের চারা। এর মধ্যে ২০ প্রকার গোলাপের চারা, ৩০ প্রকার ফলের চারা। রয়েছে বেশ কিছু মসলা, অর্কিড, ক্যাকটাস ও ওষুধি চারা। মান ও চারার বয়স অনুযায়ী তিনি সর্বনিম্ন ৫০ টাকায় বিক্রি করে থাকেন। তার নার্সারিতে হাজার টাকা মূল্যের চারাও রয়েছে। বেড অনুযায়ী তার কাছে সব মিলিয়ে এখন প্রায় ৫৫ হাজার চারা রয়েছে। যা প্রতিটি চারা গড়ে ৫০ টাকা করে ধরা হলে আর্থিক হিসাবে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা।
নিতুর চাচা শাহাদৎ হোসেন জানান, পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে সে নার্সারি শুরু করেছে। পরিবারের সকল সদস্য তাকে সহযোগিতা করছে। তিনি নিজেও নার্সারিতে সময় দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মূলত শখের বসে শুরু করেছিল। কিন্তু ক্রেতাদের চাহিদার কারণে সে কিছুটা প্রসার করেছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল