কুড়িগ্রামে পানির অভাবে কৃষকেরা জমিতে আমনের চারা রোপণ করতে পারছেন না। বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে চলে যাচ্ছে আমন রোপণ মৌসুম। ভর বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই। চারদিকে শুধু পানির জন্য হাহাকার। নির্ধারিত সময়ে আমন রোপণ করতে না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন অনেক কৃষক। এতে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশংকা কৃষকদের।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বিকল্প হিসেবে বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্পের ও বিএডিসি এর আওতায় ইতোমধ্যেই দেড় শতাধিক গভীর নলকূপ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেচের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা পুরণের জন্য মাঠ পর্যায়ে জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাগণ কাজ করছেন। এদিকে, দিন যতই যাচেছ ততই বেড়ে যাচ্ছে আমন চারার বয়স। দেরি করে রোপন করলে সেগুলো নষ্ট হতে পারে কিংবা আশানুরুপ ফল পাওয়া দুষ্কর হবে বলে জানান কৃষকরা।
তাই উদ্বিগ্ন কৃষকদের অনেকেই নিজস্ব ব্যবস্থায়ও সেচযন্ত্র চালু করে আমন রোপন শুরু করেছেন। রাজারহাটের টগরাইহাট এলাকার কৃষক মফিজুল হক জানান, আগাম সেচ দিয়ে কয়েকটি জমিতে আমন লাগিয়েছি। প্রচন্ড রোদে আমনে চারা নষ্ট হওয়ার উপক্রম। তাই চারা বাঁচাতে আমরা অনেকেই সেচ দিয়ে যাচ্ছি। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ফলন পরবর্তী দাম কি হবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
অপরদিকে,রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, গত বছর জুলাই মাসে ৮৮৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয় অথচ এ বছর আগষ্ট শুরু পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৮২ মি.মি.। বিগত বছরের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিপাত হয়েছে যা আমন আবাদে কোন কার্যকরি ভূমিকা রাখবেনা। অনাবৃষ্টিতে একরের পর একর জমি পতিত পড়ে রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৩০হেক্টর।
এরমধ্যে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিয়ে চারা রোপনের কাজ শেষ করেছেন কিছু কৃষক। আর নিচু জমিতে অল্প পানিতেও লাগিয়েছেন কিছু কৃষক। তবে শতকরা ৮০ ভাগ সেচের সাহায্যে রোপন করা হয়েছে বলে কৃষকরা জানান। তারা জানান,সেচ দিয়ে চারা লাগানোর পরেও তীব্র খরায় জমি ফেটে যাচ্ছে। তাই দফায় দফায় সেচ দিতে হচ্ছে।এতে আমন আবাদে খরচ পড়ে যাচ্ছে অনেক বেশি। অনেক এলাকায় সেচযন্ত্র চালু না থাকায় কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।
অনাবৃষ্টির কারণে রোপন বিলম্বিত হওয়ায় চারার বয়স বেড়ে রোপন অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আমন চাষ নিয়ে সংকটে পড়েছেন চাষীরা। বাড়তি খরচে সেচ দেয়ার সঙ্গতি নেই যাদের; সেসব ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা পড়েছেন বিপাকে। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মধ্য আগষ্ট পর্যন্ত চারা রোপনের সময় থাকলেও চারার বয়স বেড়ে ফলন কম হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কৃষকদের সম্পুরক সেচ দিয়ে চারা রোপনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন,বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্প ও বিএডিসি এর ৫ শতাধিক গভীর নলকূপ রেডি আছে। বিকল্প উপায়ে সেচ দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। তাছাড়া এখনও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং কৃষকদের চিন্তিত হওয়ার কোন কারন নেই।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন