২০ অক্টোবর, ২০২১ ১০:১৮

তুচ্ছ ঘটনায় ভাইসহ নারী শ্রমিককে ‘হাতুড়িপেটা’র অভিযোগ

সাভার প্রতিনিধি

তুচ্ছ ঘটনায় ভাইসহ নারী শ্রমিককে ‘হাতুড়িপেটা’র অভিযোগ

আহত সোনিয়া আক্তার

ধামরাইয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক নারী শ্রমিক ও তার ভাইকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। এসময় সন্তানদের বাঁচাতে গিয়ে কারখানার মালিকদের মারধর ও ধারালো কাঁচির আঘাতে আহত হয়েছেন ভুক্তভোগীর দরিদ্র বাবা-মা। ঘটনার এক দিন পেরিয়ে গেলেও প্রভাবশালী এক ব্যক্তির হস্তক্ষেপে স্থানীয় ভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী শ্রমিক সোনিয়া আক্তার, ভাই মো. মামুন, তাদের মা নবীজান ও স্বজনরা এসব কথা জানান। পরে রাত ১১টার দিকে ভুক্তভোগীর বাবা মোহাম্মদ আলী ধামরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

গুরুতর আহত সোনিয়া আক্তার ও তার ভাই মামুন ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের ফোটনগর এলাকার একটি হস্তশিল্প কারখানার শ্রমিক। অভিযুক্তরা হলেন, ওই কারখানার মালিক হযরত ফকির, ভাই হায়দার ফকির, ফুপাতো ভাই মো. রুবেল, চাচা শহীদ ফকিরসহ কয়েকজন। 

প্রত্যক্ষদর্শী কারখানার শ্রমিক সাথিয়া খাতুন বলেন, সোমবার বিকেলে কারখানায় কাজ করার সময় মামুনের মেশিন হঠাৎ নষ্ট হয়ে যায়। তখন মালিকের ভাই হায়দার ও মামুনের মধ্যে কথাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মালিকের ভাই অকথ্য ভাষায় গালাগাল করলে মামুন ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ করে। এসময় হায়দার গিয়ে মামুনকে ঘুষি মারে। পরে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এসময় বোন সোনিয়া এগিয়ে এসে ভাই মামুনকে নিয়ে কাজ করবে না জানিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায়। পরে হায়দার, কারখানার মালিক তার ভাই হযরত, রুবেল, শহীদ ফকিরসহ কয়েকজন গেটের বাইরে গিয়ে মামুনকে এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকে। এসময় তার বোন সোনিয়া বাঁধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে তারা। পরে তাদের দুইজনকেই হাতুড়ি দিয়ে পিটয়ে আহত করেন। খবর পেয়ে সোনিয়ার বাবা-মা ঘটনাস্থলে আসলে তারাও মারধরের শিকার হন। তবে সোনিয়া আর তার ভাই মামুনরে হাতুড় দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। ধারালো কাঁচি দিয়ে আঘাত করলে সোনিয়ার মা ও বাবা আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

অভিযুক্ত কারখানার মালিক হযরত ফকিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন সদোত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘এই পুরা বিষয়টা অন্য পর্যায়ে গেছে। আমি মিমাংসা করতে চাইছিলাম। সাইফুল ভাই নিজে দায়িত্ব নিছে।’ প্রভাবশালী সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিমাংসার দায়িত্ব পুলিশ নিয়েছে বলে জানান। 

এসময় তিনি উভয়পক্ষই অসহায় জানিয়ে বলেন, ‘যদি তারা দুই পক্ষই মিমাংসা করে, এটা হলো সবচেয়ে ভালো। যদি মিমাংসায় না আসে তাহলে মামলা করবে।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্বায়সারা জবাব দেন। সবকিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপর।

তিনি বলেন, ‘ওই ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকদের মধ্যে একটা ঝামেলা। পরে ট্রিপল নাইনে ফোন পেয়ে আমি ওখানে গেছি। যাওয়ার পরে দেখলাম যে, উভয়পক্ষই কিলাকিলি করছে। পরে ওইখানকার সাইফুল ভাই ওসি স্যারকে ফোন দিছিলো। বলছে, স্যার উভয়পক্ষের সাথে আমি কথা বলছি। আমি এটা মিটমাট করে দিবো। এইভাবে সে একটা দায়িত্ব নিছে। পরে ওসি স্যারকে বলার পরে আপনারা মিটমাট করে নিয়েন- বইলা আমি চইলা আসছি।’

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, ওদের লোক পাঠায় দেন মামলা হবে। উনিও (এসআই) ওদের (ভুক্তভোগীদের) বলে আসছে, আপনারা থানায় গিয়ে অভিযোগ দেন। আমিও ওরে বলে দিছি মামলা দিতে বলো, আমরা অ্যাকশনে যাবো।

সাইফুল নামে এক ব্যক্তি মিমাংসার দায়িত্ব নিয়েছেন এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, 'ওইটা ওদের চ্যাপ্টার। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে আমরা মামলা নিবো। এখনো কেউ অভিযোগ নিয়ে আসে নাই'।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর