নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের জামপুর ইউনিয়নের পাকুন্ডা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে ছুরিকাঘাতে নবকুমার সাহা নামে এক যুবক খুন হয়েছে।
রবিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে তাকে ছুরিকাঘাত করে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সোয়া ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নবকুমার সাহার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তালতলা তদন্ত কেন্দ্র পুলিশের ইনচার্জ ইকবাল হোসেন।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত নবকুমার সাহার প্রেমিকা তাহমিনা ও বন্ধু রহমত আলীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের ধারণা হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত।
ঘটনাস্থল থেকে নবকুমারের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিয়েছে আটকৃত দুজন। এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
নিহত নবকুমার নব কুমার সাহা নরসিংদীর হাজীপুরে গ্রামের নারায়ণ সাহার ছেলে। সে রূপগঞ্জের বান্টি বাজারে একটি থ্রি পিছের শো রুমের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ভূলতা পুলিশ ফাড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবদুল বারেক জানান, তার সহযোগিতায় ছুরিকাঘাতে আহত যুবককে গোলাকান্দাইল আল রাজী হাসপাতাল থেকে ঢামেকে পাঠানো হয়েছে। দুজন ব্যক্তির মাধ্যমে তাকে ঢামেকে পাঠানো হয়। আহত ওই যুবক মূমূর্ষ অবস্থায় একজনের হাত ধরে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছেন।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। পেটে ছুরিকাঘাতে সে জখম হয়েছে। নব কুমারের হাতে গ্লাভস লাগানো ছিল।
নিহতের ছোট ভাই শুভ সাহা বলেন, ঘটনাটি রহস্যজনক। আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। লাশ সৎকারের পর সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করবো।
তালতলা তদন্ত কেন্দ্র পুলিশের ইনচার্জ ইকবাল হোসেন জানান, নবকুমার সাহা ও তাহমিনার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। নবকুমারের বিয়ে নিয়ে তার বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে মনমালিন্য চলছে। রবিবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মোটরসাইকেল যোগে কর্মস্থল থেকে মদনপুর বন্ধু রহমত আলীকে রিসিভ করার জন্য যাচ্ছিলেন। পথে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের জামপুর ইউনিয়নের পাকুন্ডা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে আসলে তাকে ছুরিকাঘাতে আহত করে। পরে স্থানীয় দুজন ব্যক্তি তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে গাউছিয়া আল রাজী হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রাত সোয়া ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরো জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত। এ ঘটনার সঙ্গে তিনজন যুক্ত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি আরো জানান, নবকুমারকে ঢামেকে নেওয়ার আগেই প্রেমিকা তাহমিনা রাজধানীর মহাখালী থেকে ঢামেক হাসপাতালে ছুটে যান। তাহমিনাই নব কুমার সাহাকে শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত নবকুমার সাহার প্রেমিকা তাহমিনা ও বন্ধু রহমত আলীকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।
ইনচার্জ ইকবাল আরো জানান, নবকুমার সাহা হিন্দু আর তাহমিনা মুসলিম। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক নবকুমার সাহার বাড়ির লোকজন মেনে নেয়নি। এ নিয়ে তার পরিবারের মধ্যে মনমালিন্য চলছে। আটককৃত তাহমিনা গাজিপুর জেলার কাপাসিয়া থানার খিরাষী গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে। বন্ধু রহমত আলী নরসিংদী মাধবদী নওপাড়া গ্রামের দেওয়ান আলীর ছেলে। এর আগে দুবার তাহমিনাকে নিয়ে নবকুমার সাহা আটক বন্ধু রহমত আলীর বাড়িতে রাত্রিযাপন করেছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন