১ ডিসেম্বর, ২০২১ ২১:২৫

থানার পাশেই মাদকের আখড়া!

নাটোর প্রতিনিধি

থানার পাশেই মাদকের আখড়া!

নাটোর সদর থানা থেকে শহরের তৃষা ক্লিনিকের পাশের গলির দূরত্ব বড় জোর ১০০ গজ। একটি বাড়িতে গড়ে উঠেছে মাদকের আখড়া। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে হেরোইন ও ইয়াবা বেচাকেনা করে এলাকার মাদকবিক্রেতা বলে পরিচিত একটি পরিবার। এই পরিবারের প্রতিটি সদস্যই মাদকব্যবসার সাথে জড়িত। মাঝে মধ্যেই পুলিশ তাদের আটক করলে জামিনে বের হয়ে এসে ফের মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মাদক সম্রাট রফিজা ও তুষার পরিবার। নাটোর সদর থানার দেয়াল ঘেঁষেই তাদের মাদকের আখড়া। এ পরিবারের কারণে এলাকার যুবসমাজ মাদকাসক্ত হয়ে ধ্বংসের পথে বলে মনে করছে এলাকার সচেতন মহল।

বুধবার বিকেলে মাদকে জড়িতদের পরিবারের সদস্যদের ধরতে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে থানা পুলিশ। অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে শহরের কানাইখালী মহল্লার রোকন আলীর স্ত্রী কুখ্যাত মাদক সমাঞ্জী রওশন আরা (৪৮), দেবর মাদক সম্রাট তুষার শেখ (৩২) এবং তার স্ত্রী মনীষা আকতার সুমী (২৬)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬ গ্রাম হেরোইন এবং বিক্রির ১৩ হাজার টাকা ও হেরোইন বিক্রির জন্য প্রস্তুত করার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

নাটোর সদর থানা পরির্দশক (এসআই) রুবেল উদ্দীন জানান, তিতাস ও রফিজা খাতুনের পরিবার র্দীঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়ে মাদকসহ কারবারিদের গ্রেপ্তার করার পর তারা জামিনে এসে মাদক ব্যবসা করে যায়। পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ করে । 

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান জানান, নাটোর সদর থানা পুলিশ ব্লক রেইডের মাধ্যমে তিতাস পরিবারের তিনজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নাটোর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আলিমুল ইসলাম তিতাসের পরিবারের সবাই যে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সে বিষয়টি পুরো শহরে ওপেন সিক্রেট। এই পরিবারটির হাত ধরেই শহরের কানাইখালী, মাদ্রাসা মোড়, পটুয়াপাড়া ও চকরামপুর এলাকায় প্রথম মাদক ব্যবসার প্রচার ও প্রসার হয়। ছোটবেলা থেকে নানার বাসায় বসবাস করা তিতাসের বাবার নাম এলাকাবাসী কেউ জানে না। তিতাসের মাকে এলাকাবাসী মাদকের রানি রফিজা নামে সবাই চিনে। তাছাড়া মা,তার তিন মামা ও তিন মামী হেরোইন এবং ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। গাঁজা, হেরোইন ওফেনসিডিলসহ সব ধরনের মাদক মজুদ করে লুকিয়ে মাদক বিক্রি করেন। পরিবারের কোনো সদস্য গ্রেফতার হলে অন্য সদস্যরা এই ব্যবসার হাল ধরেন। এর কারণে বন্ধ হচ্ছে না মাদক বিক্রি। এবার নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়ে পুরোদমে ব্যবসায় আধিপত্য ছড়াতে ও বাধাহীনভাবে ব্যবসা করতে চাইছে তাদের পরিবার।

এলাকাবাসীরা জানান, নাটোর সদর থানা থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে তৃষা ক্লিনিকের সামনে গলি এবং আল মদীনা ক্লিনিকের পাশের গলিতে প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত  প্রতিদিন মাদক সেবীদের মেলা বসে। মেলার আয়োজক মাদক ব্যবসায়ী টনিক তিতাস, তার মা রফিজা বেগম ও মামা রশিদুল, রবিউল, তুষার এবং মামী আমেনা বেগম, সুমি বেগম, কুলসুম বেগম। তাদের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে কানাইখালীর মৃত রমিজের ছেলে রোকন এবং একই এলাকার মৃত খায়রুল ইসলামের ছেলে রনি। এরা সবাই পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক বিক্রেতা। এই পরিবারটির কারণে এলাকার তরুণ সমাজ মাদকের ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে। গ্রেফতার হয় আবার ছাড়াও পায়। স্বামীরা জেলে থাকলে স্ত্রীরা মাদক ব্যবসা চালান। 

শিক্ষাবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, তিতাসের পরিবারটি চিহ্নিত মাদক কারবারি পরিবার। এ পরিবারের কারণে নাটোর পৌরসভার তরুণ প্রজন্মের অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। পুলিশ বারবার গ্রেফতার করার পর তারা কীভাবে থানার পাশে আস্তানা গড়ে তুলে দিনদুপুরে মাদক ব্যবসা করে আসছে-এ প্রশ্ন এখন পুরো নাটোর পৌরসভার জনগণের। পরিবারটির বিরুদ্ধে আইনগত লড়াইয়ের পাশাপাশি সামাজিক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তিতাসের ছত্রছায়ায় যারা আছে তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর