৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:১০

মৌ খামারিদের ভাগ্যবদল

নাটোর প্রতিনিধি

মৌ খামারিদের ভাগ্যবদল

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মাঠের পর মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে বিরাজ করছে থোকা থোকা হলুদ ফুলের দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এ সুযোগে মৌ-খামারিরা খেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে মৌ বক্স বসিয়েছেন। সেখান থেকে দলে দলে মৌ-মাছির ঝাঁক বসছে সরিষার হলুদ ফুলে। একদিকে মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়ন ঘটছে সরিষা উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে মৌ-খামারিরা মধু সংগ্রহ করে বদলে দিচ্ছে তাদের ভাগ্যের চাকা।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ৭৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। শষ্য বহুমুখীকরণে কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রায় চেয়ে অধিক সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন।

সরোজমিন গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা, রুহাই ও বামনবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তৃত মাঠে সরিষা ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন। খেতের পাশেই মৌ-খামারিরা বাক্স পেতে রেখেছেন। মৌমাছিগুলো সরিষাফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সের ভেতর ঢুকছে আর বের হচ্ছে।

বিলশা ও রুহাই গ্রামে সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন নাজিরপুর ইউনিয়নের জুমাইনগর গ্রামের মৌচাষি সানোয়ার হোসেন। তিনি জানান, তার ১৪০টি মৌবাক্স রয়েছে। সেখান থেকে সপ্তাহে ৮ মণ মধু সংগৃহীত হয়। তিনি ছাড়াও আরও ২ জন শ্রমিক নিয়োজিত আছে। 

একই ইউনিয়নের মোল্লা বাজার গ্রামের মৌচাষি বেলাল হোসেন জানান, তাদের উৎপাদিত মধুগুলো এপি, ডাবর, কম্বোসহ দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানি ৬-৭ হাজার টাকা মণ হিসাবে পাইকারি কিনে নেন। ডিসেম্বর মাসজুড়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগৃহীত হয়ে থাকে। তার মতো এ উপজেলার অন্তত ৪০ জন মৌচাষি এ পেশার সাথে যুক্ত।

উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের বিলশা গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন জানান, স্বল্পসময়ে সরিষার ফসল ঘরে তুলে একই জমিতে বোরো ধান চাষ করা যায়। একারণে সরিষা চাষ করে থাকি। এ বছর তিনি ৬ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। সরিষার গাছ যে সুন্দর দেখা যাচ্ছে তাতে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। 

রুহাই গ্রামের কৃষক আতিকুর রহমান বলেন, তিনি ১০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এ বছর চলনবিল থেকে দ্রুত বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার কারণে তার মতো এলাকার অধিকাংশ কৃষক সরিষার আবাদ করেছেন। অল্প সময়ে এ ফসল ঘরে তুলে বোরো আবাদ করা যায় বলে আমরা সরিষা চাষ করছি।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ জানান, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৭৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ভোজ্য তেল ও সরিষার বাজারদর বেশি থাকায় সরিষা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি। একারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ ও উৎপাদন দুটোই বাড়বে। আর সরিষা ফুলকেন্দ্রিক মধু সংগ্রহে কৃষক ও মৌ-খামারিরা উভয়েই লাভবান হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর