২৫শ বরযাত্রীসহ হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করলেন রতন প্রামানিক নামে প্রবাসী এক যুবক। আর বিয়ের আয়োজনে করেছেন তারই পালক বাবা-মা। মা-বাবা বলছেন, ২৫ বছর আগে নবজাতককে কোলে তুলে হাতির পিঠে বিয়ে করাবেন বলে যে ওয়াদা করেছিলেন তা পুরণ করলেন। একদিকে হাতিতে চড়ে বরের বিয়ে অন্যদিকে সঙ্গে ২৫শ বরযাত্রী নিয়ে এমন জমকালো বিয়ের আয়োজনে এলাকাজুড়ে ব্যাপক হৈচৈ পড়ে গেছে। শুরু হয়েছে নানা মুখরোচক আলোচনা। আর বিয়ের বউভাতে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো.আব্দুল আজিজ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুরসহ জাতীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার রাজকীয় বিয়ের আয়োজনটি করা হয় তাড়াশ উপজেলার পৌর এলাকার কোহিত মহল্লায়।
জানা যায়, কোহিত মহল্লার বাসিন্দা তাড়াশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মো. রব্বেল প্রামানিকের বড় ভাই মো. একদিল প্রামানিকের স্ত্রী প্রায় ২৫ বছর আগে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে নবজাতক রেখে মারা যান। এসময় রব্বেল প্রামানিক ও তার স্ত্রী কমেলা খাতুন মা হারা নবজাতককে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে তার নাম রাখেন মো. রতন প্রামানিক। পাশাপাশি পাড়া প্রতিবেশীদের সামনে ঘোষনা দেন ছেলে বড় হলে তাকে হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করাতে নিয়ে যাবেন এবং হাতির পিঠে চড়িয়ে নতুন বউমাকে বাড়িতে নিয়ে আসবেন। আর সেই থেকেই রতন প্রামানিক ওই বাড়িতে লালিত পালিত হয়েছেন।
পরবর্তীতে রতন জীবিকার তাগিদে ইরাক পাড়ি জমান এবং তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসী হিসেবে কাজ করে দেশে ফিরে আসেন। সম্প্রতি একই উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের দিঘিসগুনা গ্রামের রইচ উদ্দিনের মেয়ে জোসনা খাতুন (২০) এর সাথে বিয়ের কথা সম্পন্ন হয়। আর বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ের দিনক্ষন ঠিক হয়। বিয়ের দিনক্ষন ঠিক হবার পরই বাবা রুব্বেল প্রামানিক ২৫ বছর আগের দেওয়া ঘোষণা রাখতে ও সখ মেটাতে ছেলের বিয়েতে হাতি জোগাড় করতে দি ল্য়ান বুলবুল সাকার্সের মালিকের কাছে যান এবং একটি হাতি ভাড়ায় নেন। দুইদিনের জন্য পনের হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া করে মঙ্গলবার কোহিত মহল্লায় তার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। আর এ খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে বিয়ে বাড়িতে এলাকার উৎসুক লোকজন রাত থেকেই ভিড় জমাতে থাকেন।
এ কারণে ভিড় সামলাতে বিয়ে বাড়ির লোকজনকে হিমশিম খেতে হয়। এরপর বৃহস্পতিবার কাঙ্খিত সেই বিয়ের দিনে সকাল থেকেই বরের বাড়ির লোকজন ভাড়া করা হাতিকে গোসল করানো ও দেখার মতো করে সাজানোর কাজ সারেন। পাশাপাশি হাতির শরীরে বর ও কনের নাম লিখে দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বরযাত্রীরা বরকে হাতির পিঠে চড়িয়ে নিয়ে যান কনের বাড়িতে। এসময় বর ও কনের বাড়ি এলাকার চার-পাঁচটি গ্রামের শিশু কিশোরসহ সব বয়সী লোকজন কনে ও বরের বাড়িতে হাতি, বউ ও জামাইকে দেখতে ভিড় জমান।
হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করতে আসা বর মো. রতন প্রামানিক জানান, বাবা-মার সখ পূরণ করতে হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করতে এসেছি। বাবা-মার কথা রক্ষা করতে পেরে কতটুকু ভাল লেগেছে তা প্রকাশ করার মত নয়। একাধিক বরযাত্রী জানান, তাড়াশ অঞ্চলে হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করার ঘটনাটি সচরাচর ঘটে না। তাই বিয়েটি উপভোগের বিষয় ছিল।
এ বিষয়ে ছেলের বাবা সাবেক ইউপি সদস্য রব্বেল প্রামানিক জানান, আমরা সখ মেটাতেই ছেলেকে হাতির পিঠে চড়িয়ে বিয়ে করাতে নিয়ে এসেছিআর সঙ্গে ২ হাজার ৫শ বরযাত্রী এসেছেন। এর মধ্যে ৯শ জন নানান আত্মীয় স্বজন ও বাকিরা আশেপাশের ১০ গ্রামের মানুষ। তিনি আরও বলেন, বউভাতের অনুষ্ঠানে আমার বাড়িতে সাড়ে ৩ হাজার কন্যা যাত্রী অংশ নিবেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ