‘ক্ষেতের সব ধান খাইয়ারছে অহনা চাল কিন্না ভাত খাইতাছি। চাইড্ডা হড়ু (সরিষা) লাগাইছি এইনও আত্তির (হাতি) চোক পড়ছে। দুইদিন ধইরা আত্তি নামছে রাইত দিন এই হড়ু ক্ষেত পহড়া দিতাছি। রাইতে আগুন জালাইয়া বুড়া বুড়ি এই খেতে পইরা থাহি।’ ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পানিহাটা গ্রামের নুর বানু বেগম (৫০)।
পাহাড়ি অঞ্চলে খাবারের সন্ধানে গত দুইদিন ধরে হাতির দল আবারো ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে এসেছে উপজেলার পানিহাটা এলাকায়।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পানিহাটার সীমান্তবর্তী ভারত অংশের একপাশে প্রায় ২২/২৩ টি হাতি দল বেধে পাহাড়ে অবস্থান করছে। অপরদিকে পানিহাটার বাংলাদেশ অংশে প্রায় ২০-২৫ জন স্থানীয় মাটির ঢিলা ও গাছের ছোট ছোট ভাঙ্গা ডাল হাতির দিকে ছুড়ে মারছে। হাতির পালে ঢিল ছুড়ায় হাতিগুলো চিৎকার করে তেড়ে আসছে। হাতির দল যখন রাগান্বিত হয়ে তেড়ে আসে তখন স্থানীয়রা দৌড়ে পিছিয়ে যায়। স্থানীয়রা যখন হাতির দলের উপর ঢিল ছুড়ে তখন হাতিগুলো পিছু হটে যায়। আবার অনেকে এই ফাঁকে হাতিকে স্বরনীয় করে রাখতে সেলফি তুলতে দেখা গেছে। হাতি ও মানুষের মুখোমুখি অবস্থান চোর পুলিশ খেলা চলে দুপুর থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত।
হাতিকে এভাবে উত্যক্ত কেনো করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয়রা জানায়, এখন যদি হাতির দলকে না তাড়াই, তাহলে এই সরিষা ক্ষেত খেয়ে ফেলবে। আর রাতে বাড়ীতে হামলা করতে পারে। তাই আমরা গ্রামবাসী মিলে হাতি তাড়াতে এসেছি।
নুর বানু বেগমের স্বামী আবদুর রশিদ বলেন, ‘এই দশ কাঠা (৫০ শতাংশ) জমিতে ধান লাগাইছিলাম হাতির পালের জন্য একমুঠো ধানও গোলায় তুলবার পাইছিনা, হাতিরপাল সব ধান খাইয়া ফালাইছে। এহন আইছে সরিষা ও ধান বীজ তলা খাইতে, হাতির হাত থাইকা ফসল ও জান বাঁচাইতেই আমরা দল বেঁধে হাতি তাড়াইতে রাইত পাহাড়ায় থাকি ।’
জানা গেছে, গত দুইদিন ধরে বন্যহাতির বিশাল একটি দল অবস্থান করছে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা মেঘালয় রাজ্যের চেরেংপাড়া পাহাড়ি অঞ্চলে। হাতির এই দলটি খাদ্যের সন্ধানে নালিতাবাড়ী উপজেলার পানিহাটা এলাকায় নেমে আসছে আবাদি জমিতে ও লোকালয়ে। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে পানিহাটা এলাকার কৃষক হাসমত আলীর বাড়ী-ঘরে হামলা করে। রাতের আধারে হাতির এমন অতর্কিত তাণ্ডবে হাসমত আলী, তার স্ত্রী ও তিন ছেলেসহ কোনা রকমে জীবন রক্ষা করে পার্শ্ববর্তী বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। ততক্ষণে হাতির পাল বসতঘরের বারান্দা ভেঙ্গে একেবারে শেষ করে দেয়।
এছাড়াও গত নভেম্বর মাসে হাতির অত্যাচারে পানিহাটায় পায়ে পিষ্ট করে বিনষ্ট হয়েছে প্রায় ৪০-৪৫ একর জমির পাকা আমন ধান ক্ষেত।
পানিহাটা এলাকার এলিফেন্ট রেসপন্স টিমের সভাপতি যোসেফ মারাক বলেন, হাতিগুলো পাহাড় থেকে দলবেঁধে নেমে আসে লোকালয়ে, রাত জেগে পাহাড়া দিয়েও রক্ষা হয় না। এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
শেরপুর বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার জানান, বন্যহাতির আক্রমন থেকে জান মাল বাঁচাতে আমরা সচেতন আছি। নিয়মিত টহল ও জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভা করা হচ্ছে। হাতিপ্রবন এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণকে হাতির আক্রমণ ঠেকাতে বন্যহাতির দলকে উত্যক্ত না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল