নাব্যতা হারিয়ে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বুল্লাই নদী। বছরের প্রতিটি দিন বহমান স্রোত ধরে রাখা এই নদীটি এখন যেন স্বাক্ষী হিসেবে পরিনত হচ্ছে জনসম্মুখে। এখন নাব্যতা হারিয়ে পরিণত হয়েছে ফসলের মাঠে। এতে দেশি মৎস্য সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে। নদীকে জীবিকা করে বেঁচে থাকা মানুষগুলো বেকার হয়ে পড়েছে। পানি প্রবাহ না থাকায় যেটুকু আছে সেটুকুও হারিয়ে যাচ্ছে মানচিত্র থেকে। এতে করে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি আগামী প্রজন্মের কাছে নদী শব্দটি মুছে যেতে বসেছে ইতিহাসের পাতা থেকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জলঢাকা উপজেলার বড়ঘাট মৌজা থেকে বের হয়ে উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে বড়ভিটা ইউনিয়নে প্রবেশ করে রনচন্ডি, গাড়াগ্রাম, মাগুড়া ইউনিয়নের উত্তর পূর্বদিকে অতিবাহিত হয়ে তারাগঞ্জ,বদরগঞ্জের ধরলা নদীতে মিলিত হয়েছে এই নদীটি। এটি রক্ষায় দাবি জানিয়েছেন সুধিজনেরা।
নীলফামারী উন্নয়ন অধিকার সংরক্ষন ফেরামের সভাপতি আবু মুসা মাহামুদুল হক বলেন, ‘ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদীর বিকল্প নেই। কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বুল্লাই নদী পলি জমে আজ প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। নদীর বুকে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। এ ছাড়া নদীটি বাঁচাতে হলে খনন করতে হবে। পরিকল্পিত ভাবে খনন করা গেলে ফিরবে নদীর যৌবন। বাঁচবে প্রকৃতি ও পরিবেশ।
গাড়াগ্রাম বাসষ্টান্ড পাড়ার এনামুল হক বলেন, নদীটি মরে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ঊজানের ঢল বন্যার পানি ধারণ করতে না পারায় প্লাবিত হয় ফসলের ক্ষেত ও বসতবাড়ি। অপর দিকে শুকনো মেীসুমে দেখা দেয় অতি খরা। ফলে নদীটি হারিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । সমতল হয়ে যাওয়া নদীটি বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে উপচে পড়ে এতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ ব্যাহত হয়।
রণচন্ডী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বিমান বলেন, একসময় নদীটি যখন গভীর ছিল, তখন এখানে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছ পাওয়া যেত। তবে বর্তমানে এখন আর দেশী মাছ চোখে পড়ে না। পানি না থাকায় কৃষকের পাশাপাশি জেলেরাও বিপদে পড়েছেন।
মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মিঠু বলেন, বুল্লাই নদী কয়েকটি ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। সেই নদীর অবস্থা একেবারে করুণ। এতে বর্ষাকালে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে নদীটি খনন করা দরকার।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল চন্দ্র সরকার বলেন, নদী খননের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে খনন করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল