নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বহুল আলোচিত বাবার কোলে থাকা অবস্থায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত শিশু তাসপিয়া আক্তার জান্নাত হত্যার মামলাটি বেগমগঞ্জ মডেল থানা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে, তাসপিয়ার হত্যাকারীরা কেউই রেহাই পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে শিশু তাসপিয়া হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতকালে পুলিশ সুপার বলেন, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো। আমরা এরই মধ্যে ৪ আসামিকে গ্রেফতার করেছি। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে সন্ত্রাসকবলিত হাজীপুর ইউনিয়নে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নারী নির্যাতন, যৌতুক, বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং ও কিশোর গ্যাংমুক্ত সমাজ গড়তে বিট পুলিশিংয়ের সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে হলে আমাদের সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। যেকোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে বিট পুলিশিং কিংবা থানায় জানান। নিরাপত্তা ও সেবা আপনাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করছে জেলা পুলিশ।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি জানান, শিশু তাসপিয়া হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত চারজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটি মঙ্গলবার বিকেলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বেগমগঞ্জে আলোচিত শিশু তাসপিয়া হত্যা মামলাটির দায়িত্ব আমাদের ওপর দেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করব।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকেল চারটার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামের মালেকার বাপের দোকান নামক স্থানে মাওলানা আবু জাহের (৩৭) ও তার কোলে থাকা ৩ বছরের শিশু তাসপিয়া আক্তার ওরফে জান্নাতকে স্থানীয় রিমন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহেরও (৩৭) গুলিবিদ্ধ হন। তিনি উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাসাদ মিয়ার বাড়ির মৃত জানু সরদারের ছেলে।
অভিযুক্ত রিমন (২৫) একই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের দানিজ বেপারী বাড়ির মমিন উল্যার ছেলে। রিমন এলাকার চিহিৃত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
নিহতের মামাতো ভাই ব্যবসায়ী আবদুল্যাহ আল মামুন বলেন, গত কয়েক দিন আগে আমাদের বাড়ির আল আমিন নামে এক ব্যক্তি জমিনের মাটি বিক্রি করে রিমনের কাকা বাদশার কাছে। বাদশা ওই জায়গা থেকে ৬ ফিট মাটি কাটে। এরপর আরও মাটি কাটতে গেলে আমাদের বাড়ির লোকজন তাকে বাধা দেয়। কারণ এভাবে মাটি কাটতে গেলে তাদের জায়গা ভেঙে পড়বে। একপর্যায়ে মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে রিমন ও তার সহযোগী রহিম, মহিন ও সুজনসহ আরও কয়েকজন গত দুই দিন একাধিকবার আমাদের বাড়িতে এসে গোলাগুলি করে এবং আমার গর্ভবতী ভাগনিকে পেটে লাথি দেয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ ওই নারীকে প্রথমে চিকিৎসা দিতে বলে।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, মাটি কাটার বিরোধের জের ধরে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে রিমনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য রহিম, মহিন ও সুজনসহ ১০-১৫ জন অস্ত্রধারী মালকার বাপের দোকান এলাকায় অবস্থিত আমার দোকানে এসে আমাকে গালিগালাজ করে। ওই সময় আমার মামা জাহের তার শিশু মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে দোকানে আসে চিপস আর চকলেট কিনে দেওয়ার জন্য। সন্ত্রাসী রিমন আমার মামাকে আমার দোকানে দেখে মামাকে গালমন্দ করে বলে তোর শেলটারে এরা এসব করছে। এ কথা বলার সাথে সাথে আমাদের উদ্দেশে গুলি করে এবং জান্নাতকে ইট দিয়ে আঘাত করে।
এরপর মামা দোকান থেকে বের হয়ে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করলে রিমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা পেছন থেকে পুনরায় জান্নাতকে ও মামাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে জান্নাতের কানে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় এবং মামা চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে জান্নাত মারা যায়।
শিশু তাসফিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় তার খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই