বরগুনার তালতলীতে নবী হোসেন জোমাদ্দার নামের এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাঁধ কেটে মাছের ঘেরে পানি নেওয়ায় প্রায় ১৭ একর জমির মুগডাল ক্ষেত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় হাহাকার করছেন কৃষক।
উপজেলার খোট্টার চর এলাকায় গত বছর প্রায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। এর ফলে কৃষকরাও ফসল চাষ করার ভরসা পায়। ৯ জন কৃষক বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এ বছর ১৭ একর জমিতে মুগডাল চাষ করেন। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা।
মুগডালের ফলন ভালো হওয়ায় ঋণ পরিশোধ করে লাভের মুখ দেখার আশা করছিলেন কৃষকরা। তবে সেই স্বপ্নের মুগডাল ঘরে তোলার আগেই স্থানীয় প্রভাবশালী নবী হোসেন জোমাদ্দার তার ব্যক্তিগত ঘেরে মাছ চাষের জন্য ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে জোয়ারের পানি তোলেন। এতে ঐ ৯ কৃষকের ১৭ একর জমির মুগডাল তলিয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধ কাটায় পানিতে মুগডাল গাছ তলিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কৃষক ইসমাইল ও ইব্রাহিম বলেন, বাবা-ছেলে এনজিও ও মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এই মুগডাল চাষ করি। আমরা ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের পরে এই মুগডাল চাষ করি। নবী হোসেনের কারণে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা পালানোর পথও খুঁজে পাবো না। তার বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিলেও কিছুই করতে পারবো না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানোর পরেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
আরেক কৃষক খলিল মিস্ত্রী কান্না ভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘নিজে অসুস্থ থেকেও দিনে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে সেই টাকা দিয়ে এই মুগডাল চাষ করেছি। গায়ের জোরে বাঁধ কেটে ঘেরে পানি উঠানোর কারণে আজ আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। আমি কি জন্য এতো কষ্ট করলাম। আমি এখন কার কাছে যাবো। কি করবো নিজেই জানি না। আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নবী হোসেন জোমাদ্দার বলেন, ‘আমার রেকর্ডি জমির উপরের বাঁধ কেটে পানি উঠাইছি। আমার লাখ লাখ টাকার মাছ বাঁচানোর জন্য পানি উঠাইছি। এতে যদি কোনও কৃষকের ক্ষতি হয় তাতে আমার কিছু করার নেই।’
উপজেলা কৃষি অফিসার সি এম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের অনুমতি না নিয়েই তিনি বাঁধ কেটেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে কৃষকরা যদি কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে চায়। তাহলে সকল ধরণের সহযোগিতা করা হবে।’
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি) বরগুনা জেলা কর্মকর্তা মো. প্রিন্স মল্লিক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাদের সহকারী প্রকৌশলী দিয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখবো। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল