নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের হাজীপুর ইউনিয়নে বাবার কোলে থাকা তাসপিয়া আক্তার জান্নাতকে (৩) গুলি করে হত্যা মামলায় চার আসামির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এছাড়া মামলার প্রধান আসামি রিমন বাহিনীর প্রধান রিমন দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আদালত থেকে এসব তথ্য জানান জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সবজেল হোসেন। রিমান্ডে নেওয়া অন্য আসামিরা হলেন-সুজন, সোহেল উদ্দিন, নাইমুল ইসলাম ও আকবর হোসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বেগমগঞ্জের ৩ নম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-ডিবি) সাইফুল ইসলাম ৪ আসামির রিমান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সবজেল হোসেন আদালতে বৃহস্পতিবার সকালে ৫ আসামির সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এরপর আদালত ৪ আসামির পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে র্যাব-১১ এর একটি দল তাসপিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। অপরদিকে, শিশু তাসপিয়া আক্তার জান্নাত হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার বিকেল চারটার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামের মালেকার বাপের দোকান নামক স্থানে মাওলানা আবু জাহের (৩৭) ও তার কোলে থাকা ৩ বছরের শিশু তাসপিয়া আক্তার ওরফে জান্নাতকে স্থানীয় রিমন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহেরও (৩৭) গুলিবিদ্ধ হন। তিনি উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাসাদ মিয়ার বাড়ির মৃত জানু সরদারের ছেলে।
অভিযুক্ত রিমন (২৫) একই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের দানিজ বেপারী বাড়ির মমিন উল্যার ছেলে। রিমন এলাকার চিহিৃত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
নিহতের মামাতো ভাই ব্যবসায়ী আবদুল্যাহ আল মামুন বলেন, গত কয়েক দিন আগে আমাদের বাড়ির আল আমিন নামে এক ব্যক্তি জমিনের মাটি বিক্রি করে রিমনের কাকা বাদশার কাছে। বাদশা ওই জায়গা থেকে ৬ ফিট মাটি কাটে। এরপর আরও মাটি কাটতে গেলে আমাদের বাড়ির লোকজন তাকে বাধা দেয়। কারণ এভাবে মাটি কাটতে গেলে তাদের জায়গা ভেঙে পড়বে। একপর্যায়ে মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে রিমন ও তার সহযোগী রহিম, মহিন ও সুজনসহ আরও কয়েকজন গত দুই দিন একাধিকবার আমাদের বাড়িতে এসে গোলাগুলি করে এবং আমার গর্ভবতী ভাগনিকে পেটে লাথি দেয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ ওই নারীকে প্রথমে চিকিৎসা দিতে বলে।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, মাটি কাটার বিরোধের জের ধরে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে রিমনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য রহিম, মহিন ও সুজনসহ ১০-১৫ জন অস্ত্রধারী মালকার বাপের দোকান এলাকায় অবস্থিত আমার দোকানে এসে আমাকে গালিগালাজ করে। ওই সময় আমার মামা জাহের তার শিশু মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে দোকানে আসে চিপস আর চকলেট কিনে দেওয়ার জন্য। সন্ত্রাসী রিমন আমার মামাকে আমার দোকানে দেখে মামাকে গালমন্দ করে বলে তোর শেলটারে এরা এসব করছে। এ কথা বলার সাথে সাথে আমাদের উদ্দেশে গুলি করে এবং জান্নাতকে ইট দিয়ে আঘাত করে।
এরপর মামা দোকান থেকে বের হয়ে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করলে রিমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা পেছন থেকে পুনরায় জান্নাতকে ও মামাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে জান্নাতের কানে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় এবং মামা চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে জান্নাত মারা যায়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই