দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও শ্রমিকের মূল্যসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছে বগুড়া সারিয়াকান্দির চাতাল ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক বছরে লোকসানের কারণে মূলধন হারাতে বসেছেন তারা। এ সংকট উত্তোরণে সারিয়াকান্দির চাতাল ব্যবসায়ীরা সহজ শর্তে চাতাল ঋণ চান।
বগুড়া সারিয়াকান্দির চাতাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ চাতালের আনুষঙ্গিক খরচাদি বৃদ্ধির কারণে তারা বিপাকে রয়েছেন। ২০০৭ সালে ১ মণ ধান শুকাতে লেবার খরচ হতো ৩ টাকা, ২০২২ সালে এসে ১ মণ ধান শুকানোর লেবার খরচ হচ্ছে ৬০ টাকা। ২০০৭ সালে মরিচ শুকানোর দিন হাজিরা মজুরি ছিল ৩০ টাকা, ২০২২ সালে এসে দিতে হয় ২৫০ টাকা; সেসময় ১ মণ ধানের ক্রয়মূল্য ছিল ৫৫০ টাকা এখন প্রতিমণ ধান ক্রয় করতে হয় ১৩৫০ টাকা পর্যন্ত, প্রতি মণ শুকনা মরিচের ক্রয়মূল্য ছিল ১২০০ টাকা, এখন প্রতিমণ মরিচ কিনতে হচ্ছে ৭০০০ টাকায়।
অপরদিকে, ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ বিল তখন প্রতি ইউনিট ১ টাকা ৫০ পয়সা, এখন ৯ টাকা, তার সাথে আবার মিটার ভাড়া, ডিমান্ড চার্জ, সার্ভিস চার্জ, সিস্টেম লস ও বিবিধ প্রভূতি যোগ হয়। প্রথমে যে মূলধন নিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করেছিলেন, এখন সেই মূলধনের প্রায় ২০ গুণের বেশি মূলধন যোগান দিতে হচ্ছে। যার যোগানের অভাবে তাদের চাতাল ব্যবসা প্রায় বন্ধের পথে। এ সংকট হতে উত্তোরণের জন্য তারা স্বল্প সুদে সরকারি লোন চান ব্যবসায়ীরা।
সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটফুলবাড়ী ইউনিয়নের চাতাল ব্যবসায়ী একাব্বর হোসেন জানান, পুঁজি সংকটে বেশ কয়েকদিন ধরে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরপাক খাচ্ছেন লোনের আশায়। চড়া সুদে লোন নিতে হচ্ছে তাকে।
একই এলাকার চাতাল ব্যবসায়ী মোকছেদুল আলম বলেন, ক্রমাগত লোকসানের জন্য গত কয়েকবছর ব্যবসা বন্ধ করে চাতাল একটি কোম্পানিকে ভাড়া দিয়েছিলাম। সবেমাত্র পুনরায় শুরু করেছি, তবে অনেক টাকা মূলধন বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। সরকারি সহজ শর্তে ঋণ আমাদের একান্ত প্রয়োজন।
সারিয়াকান্দি চাউল কল মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক জানান, এ উপজেলায় ১২০টি চাউলকল রয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত ১০০টি। পুঁজির অভাবে আমাদের চাতাল ব্যবসা টিকিয়ে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য হয়েছে। ব্যাংকে আমাদের যে লোন রয়েছে, সেই লোন বাড়িয়ে দিয়ে সহজ শর্তে আমরা সরকারের কাছে লোন চাই।
বাংলাদেশ রূপালি ব্যাংক হাটফুলবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ বলেন, যারা ভাল ব্যবসায়ী তাদের উপযুক্ত জামানতের ভিত্তিতে লোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তবে শর্ত শিথিলের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত।
সারিয়াকান্দি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা দেওয়ান মো. আতিকুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় মাত্র একটি প্রাইভেট ব্যাংক রয়েছে, আর সবই সরকারি ব্যাংক। প্রাইভেট ব্যাংকে আনলিমিটেড লোন পাওয়া যায়, অপরদিকে সরকারি ব্যাংকের লোনের পরিমাণ সীমিত। ফলে তারা সীমিত লোন পাচ্ছেন। তবে চাতাল ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই