জমি লিখে না দেওয়ায় মাকে নির্যাতন করে দুই হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছেলের বিরুদ্ধে। হাত-পা মাথাসহ ওই মায়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলেকে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত ৩ মে দিনাজপুর শহরের বড়বন্দর নতুনপাড়া মহল্লায় ঘটনাটি ঘটে।
নির্যাতনের শিকার মা রেজিয়া খাতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষিকা। তিনি বড়বন্দর নতুনপাড়া মহল্লার মৃত বাহার আলীর স্ত্রী। স্বামী বাহার আলী দিনাজপুর জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ছেলে মো. রাজীব আলী ডন একটি বেসরকারি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
পুলিশ ও তার পরিবারের তথ্যে জানা যায়, রেজিয়া বেগমের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে মারা গেছেন। স্বামীও মারা গেছেন অনেক আগে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ছেলে মো. রাজীব আলী ডন। কিছুদিন থেকে রাজীব মায়ের কাছে বসতবাড়ির ১৬ শতাংশ জমি লিখে নিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু মা তাতে রাজি হচ্ছিলেন না। একসময় রাজীব বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু করলে মা বাধ্য হয়ে তাকে তিন শতাংশ জমি লিখে দেন। বাকি জমি লিখে না দেওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। গত ১৯ রমজান মাকে আবারও নির্যাতন করেন রাজীব আলী। সেদিন পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের সমঝোতায় ছাড়া পান তিনি। পরে গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে রাজীব ও তার স্ত্রী খালেদা ওই বৃদ্ধাকে বাকি জমি লিখে দিতে চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ছেলে ও তার স্ত্রী বৃদ্ধার ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেন। নির্যাতন সইতে না পেরে মা বাড়ি থেকে পালিয়ে আসলে আবারও টেনেহিঁচড়ে বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন করেন ছেলে ও তার স্ত্রী। এসময় ওই বৃদ্ধা হাত, পাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত পান। এসময় বড় ছেলের রেখে যাওয়া সন্তান লিমন ফুফুদের খবর দিলে তারা এসে মাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দুই হাতে প্লাস্টার করার জন্য দুই মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় বৃদ্ধা রেজিয়া বেগমকে।
অপারেশন থিয়েটারের সামনে মা রেজিয়া বেগম বলেন, আমি বারবার ছেলেকে বলছিলাম বাবা, তুই আমাকে মারিস না, আমি তোর মা। কিন্তু ছেলে শোনেনি। আর যে ছেলেকে আদর-যত্ন দিয়ে মানুষ করেছি সেই ছেলে মাকে নির্যাতনের ঘটনায় জেলে। বলেন দেখি, এটা কী হয়!
কোতোয়াল থানার ওসি মো. মোজাফফর হোসেন এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ পেয়ে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা রেকর্ড করে তাকে বৃহস্পতিবারই আদালতে চালান করে দেওয়া হলে বিচারক কারাগারে পাঠিয়েছেন। তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা