চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৬৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা কাশিয়াডাঙ্গা-ত্রিমোহিনী বাঁশের সাঁকো। সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়ন ও যশোর জেলার ত্রিমোহনী বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের উপর এই সংযোগ সাঁকোটিই এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের মূল ভরসা। এলাকাবাসীর দাবি সত্ত্বেও এখনও সেখানে কোনও পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
২০০১ সালে কাশিয়াডাঙ্গা ও ত্রিমোহিনী এলাকাবাসী যশোর জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর ও সাতক্ষীরার জেলার কলারোয়া উপজেলার যোগাযোগ ও পারাপারের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত এই কপোতাক্ষ নদের উপর বাঁশ, কাঠ ও খুঁটি দিয়ে নির্মাণ করেন এই সেতুটি। উদ্যোক্তাদের দাবি, এতে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছিল। বর্তমানে এই বাঁশের সাঁকোটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে ২৭৫ ফুট দীর্ঘ এই সাঁকোতেই চলাচল করছে এখানকার মানুষ। ফলে ঝড় বর্ষা-বাদলে প্রতিনিয়ন ঘটছে দুর্ঘটনা।
জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন সরকারিভাবে সেতুটি নির্মাণ হলে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের সাথে যশোর জেলা শহরের প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে আসবে। এছাড়া কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেমন ব্যাপক সুফল পাওয়া যাবে, তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠবে। অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী।
কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, ত্রিমোহিনী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনিসুর রহমান ও দেয়াড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুব রহমান জানান, এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের পারাপারের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে সাঁকোটি ব্যবহার হয়ে থাকে। কৃষি প্রধান এলাকায় কৃষকের উৎপাদিত ফসল ধান, পাট, বিভিন্ন শাক-সবজি, মাছসহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য বাজারজাত করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে উপযুক্ত ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল এলাকাবাসী। এছাড়া স্কুল কলেজে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা ওপারে যশোর জেলা ও কেশবপুর উপজেলা সদর ও ত্রিমোহনীতে অবস্থিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হতো এবং সেটি ছিল অনেক কষ্ঠসাধ্য ব্যাপার। এ ছাড়া অসুস্থ ও মুমূর্ষু রোগীকে কলারোয়া উপজেলা সদরে নিয়ে আসতে অনেকটা সময় সাপেক্ষ বিষয় ছিল। কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। কিন্তু পাশেই কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেখানে যেতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। আর এসবের কথা মাথায় রেখে স্থানীয় ২০-২২ জন যুবক বাঁশ দিয়ে ওই স্থানে কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে। যার ব্যয় হয় প্রায় ৪ লক্ষ টাকা।
সেতুটি নির্মাণ হলে জনদুর্ভোগ কমবে, উন্নতি হবে আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্য। সে আশায় বুক বেঁধে আছেন কপোতাক্ষ পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। অনেকেই মনে করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য উদ্যোগ নিলে এখানে খুব শিগগিরই পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব।
কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরী জানান, এলাকাবাসী জনদুর্ভোগ লাঘবে ব্রিজটি নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি গুরুত্বসহকারের জানানো হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল