গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বাস-প্রাভেটকার ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুই পরিবারের ৫ জনসহ মোট ৯ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছে আরো অন্তত ২৪ জন। আজ শনিবার সকাল ১১টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ ফুকরা এলাকায় এ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন গোপালগঞ্জ শহরের সাবেক কমিশনার প্রফুল কুমার সাহার ছেলে ডা. বাসুদেব সাহা, স্ত্রী শিবানী সাহা, ছেলে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিপলি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র স্বপ্নীল সাহা, প্রাইভেটকার চালক মো. আজিজ মিয়া, কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা গ্রামের ফিরোজ মোল্লা, তার স্ত্রী রুমা বেগম, অনিক মিয়া ও জেসমিন আক্তার, তবে একজনের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত কলি খানম, দিদার শরীফ, বদর মিয়া, সোবাহান, বায়েজীদ, আর্জু বেগম, কালাম মিয়া, মাহফুজ, কামরুল, ফারুক, মাসুম মোল্লা, হীরা, হাওয়া বেগম, হোসাইন, আ. রহমান, জোহরা, ইসমোতারা, আলিফ ও সিফাত। তাদের গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সকালে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে করে বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক গোপালগঞ্জের প্রফুল কুমার সাহার ছেলে বাসুদেব সাহা স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ঢাকা থেকে অসুস্থ মাকে দেখতে গোপালগঞ্জ আসছিলেন। অপরদিকে, কাশিয়ানীর ফুকরা থেকে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে অনিক মিয়া ও জেসমিন আক্তার গোপালগঞ্জ শহরের দিকে আসছিলো।
ঘটনাস্থলে প্রাইভেটকার ও ওই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এ সময় বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ঢাকাগামী রাজিব পরিবহনের একটি দ্রুতগামী যাত্রীবাহী বাস অপর একটি নসিমনকে সাইড দিতে গেলে প্রাইভেটকারের সাথে বাসের সংঘর্ষ ঘটে। তখন প্রাইভেটকারটি দুমড়ে মুচড়ে মহাসড়কের পাশে থাকা ধান মাড়াইরত মেশিনের ওপর ছিটকে পড়ে এবং যাত্রীবাহী বাসটি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে রাস্তার উপর উল্টে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ডাক্তার বাসুদেব সাহা, তার স্ত্রী ও সন্তান ও ধান মাড়াইরত ফিরোজ মোল্লা ও তার স্ত্রীসহ ৭ জন ঘটনাস্থলে নিহত হন। দ্রুতগতি ও মহাসড়কের উপর ধান মাড়াই করার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
রাজিব পরিবহনের যাত্রী মো. শহিদুল আলম বলেন, তিনি বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ছেলেকে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় পতিত বাসটির পিছনের দিকের সিটে তিনি ছিলেন। বাসটির গতি অনেক বেশি থাকায় চালক বাসটির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। মুহূর্তের মধ্যে বাসটি রাস্তার উপর উল্টে যায়। এতে তার শিশু সন্তান খুব ভয় পেয়েছে। বাসের অনেক যাত্রী আহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেছেন, যত্রতত্র মহাসড়কের উপর মাড়াইকল দিয়ে ধান মাড়াই করার কারণে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। আজকের দুর্ঘটনাও সড়কের উপর ধান মাড়াই করার কারণে ঘটেছে। কারণ যেখানে ধান মাড়াই করা হয় এর আশপাশের বেশ কিছু জায়গায় ধানের খড় ও অবশিষ্টাংশ যানবাহন ও পথচারীদের ভোগান্তীর মধ্যে ফেলে ও দুর্ঘটনা ঘটে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দীকা, কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদি হাসান, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করে নিহত ও আহতদের খোঁজখবর নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেছেন, মহাসড়কে ধান মাড়াই ও দ্রুত গতির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আহতদের গুরুত্বের সাথে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিহতদের পরিবার প্রতি ১০ হাজার টাকা ও আহতদের প্রত্যেককে চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতেদের লাশ পুলিশ হেফাজতে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন/শফিক