২৩ মে, ২০২২ ১৬:২৩

যশোর থেকে রপ্তানি হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন সবজিও

সাইফুল ইসলাম, যশোর

যশোর থেকে রপ্তানি 
হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন সবজিও

শীতকালীন সবজির পর এবার যশোর থেকে গ্রীষ্মকালীন সবজিও রপ্তানি শুরু হয়েছে। সোমবার যশোরের মণিরামপুর উপজেলার পলাশীতে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রীষ্মকালীন সবজি পটলের রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম দফায় আড়াইশ মেট্রিক টন পটল ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। অল্পদিনের মধ্যেই পটলের পাশাপাশি লাউ, পেপে, কাঁচা কলা, করোলাসহ আরও কয়েক ধরণের সবজি রপ্তানির তালিকায় যোগ হতে যাচ্ছে বলেও জানান তারা। 

আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী রপ্তানিযোগ্য সবজি উৎপাদনে দীর্ঘদিন ধরে যশোর অঞ্চলের চাষীদের সাথে কাজ করছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সলিডারিডাড ও জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন। তাদের ‘সফল’ নামের এই প্রকল্পে যশোর অঞ্চলের প্রায় ১২ হাজার চাষী যুক্ত রয়েছেন। 

মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা গ্রামের চাষী মাহাবুর রহমান এবার ১৭ শতক জমিতে পটলের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আগে পটল চাষ খুব একটা লাভজনক ছিল না। দাম না থাকায় অনেক সময় পটল হাটে ফেলে রেখেই বাড়ি চলে আসতে হতো। অথচ এখন বিদেশে রপ্তানি শুরু হওয়ায় চাহিদা এতো বেড়েছে যে আমরা পটল সাপ্লাই দিয়ে পারছি না। দামও অনেক ভাল পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই এখন রপ্তানিযোগ্য সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। পলাশী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক পটলের চাষ করেছেন ৩০ শতক জমিতে। আড়াই মাসের মধ্যেই তিনি ৬০ হাজার টাকার পটল বিক্রি করেছেন। এই ক্ষেত থেকে আগামি কিছুদিনে আরও দুই-আড়াই লাখ টাকার পটল বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

একই গ্রামের চাষী সঞ্জয় কুমার মন্ডল ১৫ কাটা জমিতে পটল চাষ করে এখন প্রতি সপ্তায় ১০ থেকে ১৫ মন পটল বিক্রি করতে পারছেন। তিনি বলেন, রপ্তানিযোগ্য পটল চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এখন পটলের অনেক বেশি দাম পাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে যে দাম থাকে তার চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দিয়ে রফতানীকারকরা তাদের কাছ থেকে পটল নিয়ে যান। একই ধরণের কথা বলেন পলাশী গ্রামের চাষী শাহীনুর কামাল। 

জাগরণী চক্রের প্রকল্প সমন্বয়কারী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রথম পর্যায়ে এই প্রকল্পের আওতায় চাষীদের উৎপাদিত পণ্যের সাপলাই চেইন উন্নত করতে কাজ করা হয়। কিন্তু উৎপাদন অনেক বেশি হলে চাষীরা নায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন। সবজির ভরা মৌসুমে যাতে চাষীরা নায্য দাম পান সেজন্যই আমরা এসব সবজি বিদেশে রপ্তানির উপায় নিয়ে কাজ শুরু করি।

সলিডারিডাড-এর সফল প্রকল্পের সমন্বয়কারী ইন্দু ভূষণ রায় বলেন, আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী সবজি উৎপাদনের জন্য আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। এরপর এই সবজি ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্যএশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানির জন্য দেশের সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকদের সাথে চাষীদের সরাসরি সংযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। মাঝখানে কোন মধ্যস্বত্বভোগী থাকে না। যার ফলে চাষীরা স্থানীয় বাজারের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশিতে তাদের সবজি বিক্রি করতে পারেন। তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে আমরা কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ শুরু করি। এরপর ২০১৬ সাল থেকে অল্প অল্প করে সবজি রপ্তানি শুরু হয়। মাঝে করোনার কারণে কিছুটা সমস্যা হলেও ২০২১-২২ সালেও প্রচুর সবজি রপ্তানি হয়েছে। 

একই সংস্থার ফ্রুটস এন্ড ভেজিটেবল কমোডিটি ম্যানেজার কৃষিবিদ ড. নাজমুন নাহার বলেন, ২০১৮ সালের দিকে বছরে ২০-২২ মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি হতো। রপ্তানিকারকও ছিলেন মাত্র একজন। এরপর যশোর অঞ্চলের নিরাপদ সবজির বিষয়টি বায়াররা যখন জানতে শুরু করেন, এর চাহিদাও বাড়তে থাকে। এখন ৪২ জন রপ্তানিকারণ সবজি রপ্তানি করেন।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, যশোর অঞ্চলে এবার ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে পটলের।

তিনি বলেন, বেসরকারি সংস্থা সলিডারিডাড ও জাগরণী চক্র কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে চাষীদের নিরাপদ ও রপ্তানিযোগ্য সবজি চাষের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। ফলে আগামিতে সবজি রপ্তানি আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর