বাগেরহাটের সাথে পিরোজপুর জেলার সীমান্তবর্তী চিতলমারী উপজেলার এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বুধবার সকালে নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের লোকজনের দখলের হুমকিতে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তোজনা।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুর ও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েকশ লোক বুধবার সকাল থেকে সীমানার দুই পাশে অবস্থান নিয়েছেন। দুই পক্ষের সংঘর্ষ এড়াতে সীমানার দুইপাশে নাজিরপুর ও চিতলমারী থানা পুলিশের দুটি দল অবস্থান করছে।
চিতলমারীর সন্তোষপুর ইউনিয়নের উমাজুড়ি এলাকার লোকজনের অভিযোগ, তারা দীর্ঘ ৩ যুগ ধরে বলেশ্বর নদীর পাড়ে উমাজুড়ি ও চরবানিয়ারি মৌজায় বসবাস করে আসছেন। কিন্তু দুই জেলার সীমানা জটিলতার অজুহাতে নাজিরপুর উপজেলার কিছু প্রভাবশালী লোক উমাজুরি ও চরবানিয়ারি এলাকার শতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদের পায়তারা করে আসছে। মাটিভাঙ্গা এলাকার লোকদের হুমকিতে কিছুদিন ধরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে উমাজুড়ি ও চরবানিয়ারি এলাকার লোকজন।
সন্তোষপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবু বকর শেখ বলেন, চিতলমারী উপজেলার কালিগঞ্জ ব্রিজের উত্তরপারে চরবানিয়ারি ও উমাজুড়ি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট জেলার শতাধিক পরিবার বসবাস করে আসছে। কিন্তু সীমানা নিয়ে নাজিরপুর এলাকার লোকদের সাথে একটি বিরোধ রয়েছে। এর জন্য তারা বারবার আমাদের ওপর হামলা করে। ১৯৯৫ সালে একশো ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। পরে কয়েকবার আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করেছে তারা। এসব বিরোধ নিরসনে কয়েকবার দুই জেলা ও উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সীমানা মেপে নির্ধারণ করা হয়েছে। সবার সম্মতিতে চরবানিয়ারি মৌজায় মুজিবর রহমান শামীমের ইটভাটার মাজখানে সীমানা পিলার দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী সবাই যে-যার সীমানায় ভোগ দখল করে আসছিল।
কিন্তু জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের একটি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ১ জুন একটি সার্ভে টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। নাজিরপুর এলাকার প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে জমি পরিমাপ করে চিতলমারী উপজেলাধীন ১৭ নম্বর উমাজুড়ি মৌজার মাঝে সীমানা পিলার স্থাপন করে যায়, যা অন্যায়। জরিপ টিম যে সীমানা পিলার স্থাপন করেছেন, তাতে উমাজুড়ি এলাকার অন্তত ৭০টি পরিবার নাজিরপুর এলাকার মধ্যে পড়েছে। এই সীমানা পিলার স্থাপনের পর থেকে নাজিরপুর এলাকার বাবুল ও কেরামতসহ বেশকিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই ৭০টি পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে। রাতে এসে ঘর-বাড়িতে হামলাও করছে নাজিরপুরের লোকজন। সীমানা বিরোধ থাকলে এটার সমাধান রয়েছে। এভাবে ঘরে আগুন দেওয়া, হামলা ভয়ভীতি কোনো সমাধান হতে পারে না। আমরা চাই দুই জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসে সীমানা নির্ধারণ করে দিক। তাতে এলাকার লোকজন শান্তিতে বসবাস করতে পারবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় রহমত বাওয়ালী বলেন, নাজিরপুর এলাকার লোকজন আগে একবার আমাদের এলাকার একশো ঘর পুড়িয়েছে। বছর দুয়েক আগে চারটি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। আমরা ৩০ থেকে ৩৫ বছর এখানে বসবাস করে আসছি। এই স্থানের জমির রেকর্ডসহ সকল কাগজপত্র আমাদের নামে। তারপরেও নাজিরপুর এলাকার লোকজন এসে আমাদের ওপর অত্যাচার করে। আমরা কোথায় যাব।
ফিরোজা বেগম নামের এক নারী বলেন, কয়েকদিন ধরে নাজিরপুর এলাকার বাবুল ও কেরামতের নেতৃত্বে কিছু লোক উমাজুড়ি এসে রাতের আধারে ঘরবাড়ির ওপর ঢিল ছুড়ছে। ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এলাকা ছেড়ে না গেলে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে তারা। আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই। এ ধরনের হানাহানি আমরা চাই না। এজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই নারী।
শুধু এই তিনজন নয়, স্থানীয় রাজ্জাক মেম্বার, আব্দুল মালেক, মোশারেফ গাজী, বিমল রায়, উষা রানী রায়, রুপিয়া বেগম, কামারুন আক্তার ও মজিবুর রহমান মোল্লাসহ সন্তোষপুর ইউনিয়নের শতশত মানুষের বক্তব্য একই।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, সীমানা বিরোধ নিয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। উভয় উপজেলার লোকদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, সীমানা বিরোধ নিয়ে উত্তেজনার খবরে দুই উপজেলার সীমানায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বিভাগীয় কমিশনারকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। সীমানা যেখানেই হোক জমির মালিকানা একই থাকবে বলেও জানান দুই জেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই