নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি উপজেলা কলমাকন্দার ৩৪৫ টি গ্রামের সবকটিতে পানি বন্দি সাধারণ মানুষ। মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলে সোমেশ্বরীর শাখা নদী উব্দাখালির পানি বিপৎসীমার এখনো ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত রবিবারে তুলনায় ২৭ সেন্টিমিটার কমলেও সব এলাকার পানি নামতে আরও দু থেকে তিন দিন সময় লাগবে।
এদিকে নতুন করে বাড়ছে সদরসহ বারহাট্টার পানি। কংশ নদীর পানি গত দিনের চেয়ে ২০ সেন্টিমিটার কমলেও আজ সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টিতে পানি বন্দি নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের তাতিয়র নদীপারের কয়েক শতাধিক মানুষ। সব মিলিয়ে জেলায় কয়েক লাখ মানুষ এখন পানি বন্দি আছেন। কলমাকান্দা থেকে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ছোট ছোট গ্রামীণ সড়কগুলোতেও উঠে পড়েছে পানি।
তাতিয়র ৫ নং ব্লকের গ্রাম পুলিশ স্বপন কুমার জানান, তার এলাকাতেই তিন শতাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। অন্যান্য গ্রামগুলোতেও একই অবস্থা।
এদিকে একই এলাকার জোগার পাড়ের ৫০ টি গ্রামসড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন। কারো কারো বাড়িত ১৭ দিনের, কারো ২ মাসের সন্তান রয়েছে। যে সব বাচ্চারা মায়ের দুধ ছাড়া বিকল্প নেই। কিন্তু গত চারদিন ধরে ওইসব এলাকায় চিড়া মুড়ি খেয়ে দিন পার করছেন অর্ধশত পরিবার। এক বাড়িতে চার পাঁচ বাড়ির মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছে। থাকছেন গাবদিপশুর সাথেই।
গ্রামের ফজরু মিয়া বলেন, ‘কয়েক বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু একটি বারের জন্যেও তারা খোঁজ নিচ্ছে না। বড় ভাইয়ের ছেলে সোহাগের ১৭ দিনের শিশু খাবার না পেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। কারণ তার মা চিড়া মুড়ি ছাড়া কিছু খেতে না পাড়ায় দুধ তৈরি হচ্ছে না। অন্য উপজেলায় গরু নিয়ে যাচ্ছে নৌকায় করে।’
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, চেষ্টা করা হচ্ছে তাদেরকে সহযোগিতার। ১৫০ পরিবারের খাবার বরাদ্দ দিয়েছে সোমবার। এগুলো বিকালে তুলে মঙ্গলবার বিতরণ করা হবে। তিনটি ইউনিয়নের সড়ক ডুবে গেছে। তিনি বলেন, ‘এতগুলো মানুষ পানি বন্দি তার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে মাত্র ৭ টি পরিবার। অন্যরা যাচ্ছে না।’
সড়কের পাড়ের আব্দুল আলিমের পরিবারের আত্মীয় স্বজনরা সবাই বাড়িতে জায়গা নিয়েছেন। টিনের চুলা বানিয়ে একবার রান্নার ব্যবস্থা করছেন। যাতে অন্তত বেঁচে থাকতে পারেন। এদিকে গরুর জন্যেও রান্না করছেন চালের জাউ। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেও তাদের নানা রকমের অসুবিধার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। এমন নানা দুর্ভোগেই বানভাসি মানুষের দিন কাটছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, জেলার সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানি বন্দি। তাদের জন্য ১৩ লাখ টাকা, ৩২৩ মেট্রিকটন চাল এবং ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। যেখানে যেখানে অবস্থা খারাপ সেখানে সেখানে সমন্বিতভাবে সেনাবাহিনী উদ্ধার কার্য চালিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল