কুড়িগ্রামের সবকয়টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সোমবার বিকেল ৩টায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় পানি আরো বেড়ে ধরলা নদীর সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমর নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে।
প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নদ-নদীর অববাহিকার আড়াই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের আরো অনেক নতুন নতুন এলাকা। পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার ৯ উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের প্রায় ২৮৪টি গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে আছে। বানভাসীদের দুর্ভোগ এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সেই সাথে দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। বন্যার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় দেড় শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রৌমারী উপজেলায় ৪৪টি ও চিলমারীতে ২৭টিসহ ১২০টি এবং ৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানিতে নিমজ্জিত। ৬৭১টি নলকূপ ও ১৮৩টি ল্যাট্রিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮৫ হেক্টর আয়তনের পুকুর ও দীঘি এবং ১১৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে।
অন্যদিকে, বন্যার তীব্র পানির স্রোতে নাগেশ্বরীতে সড়কের উপর দিয়ে পানি যাচ্ছে এবং সদরের যাত্রাপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে ইতিমধ্যেই পানি উঠেছে। অনেক জায়গায় কাঁচা-পাকা সড়কের আংশিক ধসে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। ফলে ওই এলাকায় অন্তত দুই শতাধিক বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া পাঁচগাছী ইউনিয়নের শুলকুর বাজার ব্রিজটি দীর্ঘদিন পুনর্নির্মাণে ফেলে রাখায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখন ওই রাস্তা দিয়ে বিকল্প পথে মানুষ নৌকায় যাতায়াত করছে। নদী পাড়ের অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের শাহাজালাল জানান, এই চরের সবগুলো বাড়িঘরের অর্ধেকেরও বেশি তলিয়ে আছে। কিছু পরিবার অন্যত্র চলে গেলেও কিছু পরিবার নৌকায়, ঘরের ভেতরে উঁচু করা মাচানে দিনরাত পার করছে। বাঁধের রাস্তায় অনেক বানভাসী আশ্রয় নিয়েছে। তাদের খাওয়া-দাওয়া ও স্যানিটেশন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়াও তিস্তা নদীতে পানি কম থাকায় এ নদী অববাহিকার ১৫টি পয়েন্টে তীব্র নদী ভাঙন চলছে। সদর উপজেলার সারডোব এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এখন পানির তীব্র স্রোতে মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে। গত এক সপ্তাহে ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নে ২০টি ঘর পানিতে বিলীন হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, এখন পর্যন্ত আমন বীজতলাসহ জেলার ১০ হাজার ৮৩৪ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। এগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, আমার ইউনিয়নে যে পরিমাণ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে, তাতে বরাদ্দের বাইরে আরো সহযোগিতার প্রয়োজন। ত্রাণ সহায়তা না বাড়ালে মানুষের কষ্ট কমবে না।
এদিকে, সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নে ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। এছাড়াও পৌরসভার উদ্যোগে সোমবার বিকেলে পৌরসভার সামনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী ও পৌর মেয়র মো. কাজিউল ইসলাম এক হাজার বন্যার্ত পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল, ডাল ও সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। বেসরকারিভাবে মানবিক বাংলাদেশ সোসাইটি কুড়িগ্রাম শাখার পক্ষ থেকে সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ভগবতীপুর এলাকায় ৩০০ পরিবারের মাঝে ১ কার্টুন করে বিস্কুট বিতরণ করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ত্রাণ সহায়তার কোনো সংকট হবে না। ইতিমধ্যে ৯ উপজেলায় ১৮ লাখ টাকা ও ৪০০ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই