২৮ জুন, ২০২২ ১৮:৪৪

মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে স্কুলছাত্র নওফেলকে খুন করে তার বন্ধু

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে স্কুলছাত্র 
নওফেলকে খুন করে তার বন্ধু

নওফেল

দামি মোবাইল ফোনই কাল হয় স্কুল ছাত্র নওফেল শেখের (১৪)। জন্মদিনে তাকে নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করার প্রলোভন দিয়ে ডেকে নেয় তারই বন্ধু নবির হোসেন (১৬)। এরপর গলায় মাফলার পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে নওফেলকে হত্যা করে তার মোবাইল ফোন সেট নিয়ে নেয় নবির। পরে সেই ফোন বিক্রির টাকায় বান্ধবীকে নিয়ে হোটেলে গিয়ে ফুর্তি করে সে। বগুড়ার  শাজাহানপুর উপজেলার দাড়িগাছা গ্রামের ইসরাইল শেখের ছেলে নওফেলকে গত ১৮ জুন খুন করা হয়।

নওফেল দাড়িগাছা ইসলামী উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সোমবার গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে নবির হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নবির দাড়িগাছা গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, নবির হোসেন লেখাপড়া না করলেও নওফেল শেখ ছিল তার ঘনিষ্ট বন্ধু। তারা দাড়িগাছা গ্রামের বিভিন্ন জঙ্গলে গিয়ে মাঝেমধ্যেই ধুমপান করতো। দুই মাস আগে জমি বিক্রি করে ১৮ হাজার টাকায় একমাত্র ছেলে নওফেলকে স্মার্ট ফোন কিনে দেন তার বাবা। এরপর থেকেই বন্ধু  নওফেলের মোবাইল ফোনটি হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে নবির হোসেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৮ জুন নওফেলের জন্মদিন থাকায় বেলা ১১টার দিকে নওফেলকে ধুমপান করার কথা বলে কৌশলে জঙ্গলে নিয়ে যায়। নবিব আগে থেকেই নওফেলকে হত্যার উদ্দেশ্যে একটি মাফলার সঙ্গে রেখেছিলো।  জঙ্গলের একটি গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে ধুমপান করার সময় নওফেলের গলায় সেই মাফলার পেঁচিয়ে গাছের সঙ্গে ফাঁস দেয়। এতে নওফেল নিস্তেজ হয়ে পড়লে নবির পাশের জমি থেকে একটি বাঁশের লাঠি এনে নওফেলের মাথা আঘাতে করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

এরপর মরদেহ টেনে গভীর জঙ্গলে ফেলে দিয়ে মোবাইল ফোন সেটটি নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। সেই মোবাইল ফোনটি বগুড়া শহরে নিয়ে যায়। একই সঙ্গে বগুড়ার শেরপুর থেকে তার এক বান্ধবীকে শহরে ডেকে নেয়। দুইজন একত্রিত হয়ে নিজেদের ভাই বোন পরিচয় দিয়ে তারা শহরের সাতমাথায় একটি দোকানে ৫ হাজার টাকায় মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে। সেখান থেকে তারা দুইজন বগুড়া শহরের গালা পট্টির একটি আবাসিক হোটেলে গিয়ে একটি রুম ভাড়া করে। সেখানে বান্ধবীর সঙ্গে ফুর্তি করে তাকে দেড় হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করে।

হত্যাকান্ডের দুদিন পর ২০ জুন বিকেলে জঙ্গল থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয় লোকজন গিয়ে নওফেলের মরদেহ শনাক্ত করে। এরপর পর থেকেই পলাতক ছিলো নবির।
পুলিশ সুপার বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়। পুলিশের টিম প্রথমে সাতমাথা থেকে নওফেলের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে। এরপর ফোনের সূত্র ধরে আটক করা হয় নবিরের কথিত বান্ধবীকে। পরে পুলিশের একটি দল নবির হোসেনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে টঙ্গী থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পরে  জঙ্গল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মাফলারটি উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, কাগজপত্র না দেখে কম দামে মোবাইল ফোন কেনা ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক নবির হোসেনকে তার বান্ধবীসহ হোটেলে রুম ভাড়া দেওয়ায় হোটেল টুইন ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর