সুন্দরবন সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত হলেও দীর্ঘ ১৩ দিনেও সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। এখনো কোথাও কোথাও বসতবাড়ির উঠান, আঙিনা ও খাল-বিলে হাটু থেকে কোমর পানি জমে আছে। বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে রাস্তা-ঘাট। এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে।
দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পানির মধ্যে এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এলাকার টয়লেটগুলো পানিবন্দি থাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানিচাপা পড়ে শাক সবজির ক্ষেত, ফসল ও গাছ-গাছালি মারা যাওয়ায় পচা দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পানিতে চর্মবাহিত রোগসহ ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়ার প্রাদুভাব দেখা দিয়েছে। এলাকায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ছাগল, ভেড়া গরুসহ গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছে দুর্গতরা। এক ফোঁটা খাবার পানির জন্য মাইলের পর মাইল পথ যেতে হচ্ছে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটি, পশ্চিম পোড়াকাটলা, পূর্ব পোড়াকাটলা, পশ্চিম ও পূর্ব দুর্গাবাটি, আড়পাঙ্গাশিয়া, দাতিনাখালী ও কলবাড়ীসহ আশ পাশের গ্রামের নিম্নাঞ্চলের মানুষকে।
গত ১৪ জুলাই খোলপেটুয়া নদীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্গাবাটি বেড়িবাঁধটির ২০০ ফুট এলাকা প্রবল জোয়ারে নদী গর্ভে বিলিন হলে মুহূর্তে বুড়িগোয়ালীনির কমপক্ষে ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়। তার পর থেকে টানা ৫ দিন ধরে বালির জিও ব্যাগ দিয়ে ও বাঁশ, খুটি পুতে কাজ করার পর ১৯ জুলাই ভেঙে যাওয়া দুর্গাবাটি উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধটি রিংবাঁধ দিয়ে মেরামত করতে সক্ষম হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসী। এতে লোকালয়ে নদীর তীব্র জোয়ারের পানি ঢোকা বন্ধ হয়। বাঁধ ভাঙার পর লোকালয়ে ঢুকে থাকা জোয়ারের নোনা পানি এখনো বাড়ির আঙিনা ও উঠানে জমে আছে। ফলে উপকূলবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
পুড়াকাটলা গ্রামের নমিতা হালদার, সুনীতি রানী জানান, এলাকায় তীব্র খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বাড়ির আঙিনায় বাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়া গত কয়েক দিনের জমে থাকা পঁচা দুর্গন্ধ হাটু পানি ঠেলে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলস কাঁধে করে মুন্সিগঞ্জ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে লোকালয়ে আনতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন এনজিও ড্রাম ভর্তি করে এলাকায় পানি নিয়ে আসে। কিন্তু সেই পানিতে খাওয়া ছাড়া রান্না ও গোছলের জন্য কুলায় না। এক ফোটা সুপেয় পানির জন্য আমাদের গ্রামবাসীকে হাঁসফাঁস করতে হয়।
পুড়াকাটলা গ্রামের রত্নারানী ও সঞ্জিত গাইন জানান, বাঁধ মেরামত হলেও ঘর-বাড়ির উঠানে এখনো নদীর লোনা পানি জমে আছে। ফলে প্রসাব-পায়খান করতে তাদের বসচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে। সুপেয় পানির পুকুর ও আধার নষ্ট হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে লোনা পানি ব্যবহার করে শরীরে ঘাঁ-পাঁচড়া বের হয়েছে। এলাকায় পুরুষের পাশাপাশি অধিকাংশ নারী ও শিশুদের ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল