বগুড়া জেলা বিএনপির দলীয় কাউন্সিলের ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বগুড়া সদরের সংসদ সদস্য ও শীর্ষ নেতা গোলাম মোহাম্মদ সিরাজসহ অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ায় জেলা বিএনপিতে একধরণের ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই ক্ষোভের মধ্যেও জেলা বিএনপির নির্বাচন কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে।
জানা যায়, এক যুগ পর বগুড়া জেলা বিএনপির সম্মেলন হতে যাচ্ছে। আগামী ২ নভেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনও করা হয়েছে। নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। প্রার্থীরা কাউন্সিলরদের বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে নির্বাচনমুখি করছেন। জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, উৎসবমুখর পরিবেশে বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১০ সালে সর্বশেষ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে ২০১৯ সালের ১৫ মে মেয়াদোত্তীর্ণ বগুড়া জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটি ভেঙে দিয়ে বগুড়া-৫ আসনের সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
জেলা আহ্বায়ক কমিটি তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুর্নগঠনের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট দলের সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করে। একই বছরের ৩১ আগস্টের মধ্যে উপজেলা ও পৌর শাখার ২৪টি সাংগাঠনিক থানা শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নেতাকর্মীরা সম্মেলনমুখী হলে দলের আহ্বায়ক কমিটিতে আবারও পরিবর্তন ঘটে। ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের স্থলে আহ্বায়কের দায়িত্ব পান বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা। এসব ঘটনার পর এবার জেলা বিএনপির সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত তারিখ মতে প্রায় ১ যুগ পর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২ নভেম্বর।
জেলা বিএনপির সম্মেলনের জন্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয়েছে চার জনকে। তারা হলেন- বগুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র এ্যাডভোকেট এ কে এম মাহবুবুর রহমান, সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এমপি এবং সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলাম। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অ্যাডভোকেট এ কে এম সাইফুল ইসলাম এবং যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন। কমিটিতে বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেন এমপি সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। এই কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএনপি নেতা মীর শাহে আলম, এটিএম আহসানুল তৈয়ব জাকির, ডা. মামুনুর রশিদ মিঠু, অ্যাডভোকেট হামিদুল হক চৌধুরী, মোর্শেদ মিলটন, মাফতুন আহমেদ খান রুবেল এবং এ কে এম তৌহিদুল আলম মামুন।
সম্মেলন এগিয়ে আসায় ভাঙচুর নাশকতা কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হামলায় ঝিমিয়ে পড়া বিএনপিতে বাতাস লাগতে শুরু করেছে। মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা জামিন পেয়ে সামনে আসতে শুরু করেছে। অনেকেই আবারো মিছিল মিটিং এবং দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় হয়ে উঠছে। কার্যালয়ে আসছে বিএনপি নেতারা। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে জেলা বিএনপির ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জেলা বিএনপির কাউন্সিলে ভোটার তালিকায় নাম নেই, বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, সাবেক এমপি অধ্যক্ষ নূর আফরোজ বেগম জ্যোতি, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি ইনসান আলী শেখ, শাজাহানপুর থানা বিএনপি'র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আমরুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অটল, রেজাউল করিম টুলু, কৃষক দল নেতা ফার্মার রফিকুল ইসলামসহ আরো অর্ধশত নেতার। এদিকে বগুড়া জেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর উদ্বোধন করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। কাউন্সিলে মোট ভোটার রয়েছেন ২ হাজার ২২২ জন। আর ডেলিগেট থাকবেন প্রায় ৮ হাজার।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মীর শাহে আলম জানান, বিএনপি দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। এটির সদস্য হতে হলে প্রাথমিক ভাবে সদস্য ফরম পূরন করে সদস্য হতে হয়। এরপর ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনে কমিটিতে স্থান পেলে তারা উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলের মধ্যে দিয়ে কমিটি হলে তারাই শুধুমাত্র জেলা বিএনপির কাউন্সিলর হতে পারবেন। বগুড়া-৬ সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, নূর আফরোজ বেগম জ্যোতি ও জয়নাল আবেদিন চান কোনো না কোনো উপজেলার কাউন্সিলর। তারপরও তারা ভোটার বা কাউন্সিলর না হওয়ার বিষয়টি উপজেলা দায় নেবে। এটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায় না। নির্বাচন পরিচালনা কমিটিকে নিরেপক্ষ থাকতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উপর দায়িত্ব দিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল