৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ২০:১০

সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ভাঙনে আতঙ্কে তীরবর্তী মানুষ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ভাঙনে আতঙ্কে তীরবর্তী মানুষ

অব্যাহত নদী ভাঙন ও অপরিকল্পিতভাবে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে হারিয়ে গেছে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির নলছিটি, রাজাপুর, কাঠালিয়া ও সদর উপজেলার প্রায় ২০-এর অধিক এলাকা। বর্ষার মৌসুম ছাড়াও বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক বন্যা ও দুর্যোগের কারণে বছর জুড়েই লেগে থাকে নদী ভাঙন। কাগজ পত্রে নাম থাকলেও বাস্তবে অনেক এলাকার কোনো অস্তিত্ব নেই।

এভাবে চলতে থাকলে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। নদী ভাঙনের ফলে বাস্তুহারা হাজার হাজার পরিবার হয়েছে ছন্নছাড়া। পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের কথা ভেবে যে যেখানে পেরেছে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এতে করে অনেক পরিবার তাদের আত্মীয়স্বজন থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ মানুষই শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এলাকাছাড়া হয়েছে। কেউ বহু বছর পর এলাকায় ফিরে এসে পুনরায় বসতি গড়লেও অনেকেই চলে যাচ্ছে ভিন্ন জেলা-উপজেলায়। কর্মসংস্থানের সুযোগে সেখানেই স্থায়ী হচ্ছে। ফলে প্রায় কয়েক হাজার পরিবারের মধ্যে তাদের পারস্পরিক-পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হচ্ছে।

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার নিম্নাঞ্চলের পানি নেমে যাওয়ায় মাটি নরম হয়ে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। নদীর করাল গ্রাসে ইতিমধ্যেই বিলীন হয়েছে বসতঘর, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, নদী ভাঙন রোধে ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে কয়েক দফা বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে ঝালকাঠি জেলা। পাশাপাশি টানা বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানিতে তলিয়ে যায় ফসলের ক্ষেত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িসহ নিম্নাঞ্চলের স্থাপনা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শীতকালীন শাক সবজি ও ফসল। পানি নামার সাথে সাথে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়।

গত ৩ মাসে নদীতে বিলীন হয়েছে নলছিটির বহরমপুর, খাজুরিয়া, অনুরাগ, বারৈকরন, সরই, হদুয়া, সদর উপজেলার পোনাবালিয়া, দেউরি, দিয়াকুল, কিস্তাকাঠি ও রাজাপুরের বাদুরতলা, মানকিসুন্দর, নাপিতের হাট, চল্লিস কাহনিয়া, উত্তর পালট, বড়ইয়া ডিগ্রি কলেজ এলাকা, দক্ষিণ বড়ইয়া এলাকার ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হাসান বলেন, লঘুচাপ ও নিম্নচাপে সৃষ্ট বন্যায় নদী ভাঙন বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে অবস্থা বিবেচনা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িক ভাঙন রোধ করে। তবে স্থায়ীয়ভাবে ভাঙন রোধ করতে স্থায়ী বাঁধ দিতে হবে। নদী ভাঙন রোধে ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি একটি নদী ভাঙন কবলিত এলাকা। এখানে বছরের প্রায়ই নদী ভাঙন হচ্ছে। ভাঙনের ফলে বহু মানুষ বাস্তুহারা হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় লিখিত ও মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর