পটুয়াখালীর বাউফলে বয়স্ক ভাতার নাম করে সত্তরোর্ধ্ব ফুফুকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে সুকৌশলে ১৪.২৯ শতাংশ জমি লিখে নেন তিন ভাইয়ের ছেলে। বিষয়টি গোপন রাখার জন্য ওই বৃদ্ধাকেে দেওয়া হয় ২৫ হাজার টাকা। প্রতারণার মাধ্যমে জমি দলিল করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে ওই বৃদ্ধা ও তারা ছেলে-মেয়েরা জমি ফেরতের অনুরোধ করলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। নিরূপায় হয়ে ওই বৃদ্ধা আজ বৃহস্পতিবার বাউফল থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের জাফরাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী ওই বৃদ্ধার নাম রশনা বেগম (৭৫), স্বামী মৃত মোসলেম ফকির।
রশনা বেগম বলেন, আমার মামাতো ভাই ফজলে আলী হাওলাদারের ছেলে শহিদ, মোসলেম ও আরেক মামাতো ভাই সিদ্দিক হাওলাদারের ছেলে মোঃ মামুন হোসেন আমাকে বয়স্ক ভাতার নাম দেওয়ার কথা বলে বাউফল এক অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে একটা কাগজে টিপ সই দিতে বলে। আমি না বুঝে টিপসই দেই। পরে তারা আমাকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে এ কথা কাউকে বলতে নিষেধ করে।
বৃদ্ধার ছেলে মোঃ হুমায়ন কবির (৪৫) বলেন, আমার মা অত্যন্ত সহজ সরল মানুষ। তাকে বয়স্ক ভাতার নাম দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে বাউফল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে শহিদুল ইসলাম, মোসলেম ও মামুন প্রত্যেকে ৪.৭৬ শতাংশ করে মোট ১৪.২৯ শতাংশ জমি দলিল করে লিখে নেয়, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪ লাখ টাকা। এ বিষয় আমাদের না বলতে তাকে (বৃদ্ধা রশনা বেগম) ভয়ভীতি দেখানো হয়। প্রায় আড়াই মাস ধরে বিষয়টি গোপন থাকে। কয়েক দিন লোকমুখে বিষয়টি জানতে পারি। এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন স্থানীয়ভাবে বসে এটার একটা সমাধান করা হবে। গত রবিবার স্থানীয় মান্যগণ্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তারা ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিবেন বলে স্বীকার করেন। কিন্তু দুইদিন পার হলেও তারা টাকা দেয়নি। টাকা চাইলে তারা বলেন, কোনো টাকা দেওয়া হবে না। জমি তারা কিনে নিয়েছেন।বয়স্ক ভাতার নাম দেওয়ার কথা বলে জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোঃ শহিদুল ইসলাম, মোঃ মোসলেম ও মামুন হোসেন বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। রশনা বেগম স্বেচ্ছায় আমাদের জমি লিখে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কেশবপুর ইউপি চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন পিকু বলেন, উভয় পক্ষ নিয়ে বসে মীমাংসা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বাউফল সাব-রেজিস্ট্রার হাফিজা হাকিম রুমা বলেন, দলিল রেজিস্ট্রি করার আগে আমি জমি দাতা নারীর দাতার কাছে একাধিক বার জানতে চাই তিনি স্বেচ্ছায় জমি দিচ্ছেন কিনা। সব জেনে শুনেই জমি রেজিস্ট্রি হয়। এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়। তারপরেও যদি প্রতারণার ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে দলিল বাতিলের জন্য ভুক্তভোগী আদালতে মামলা করতে পারেন।
বাউফল থানার ওসি আল মামুন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ