হত্যাকাণ্ডের ২০ বছর পরে জানা গেল বাদীই ছিলেন সন্তানের হত্যাকারী। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সন্তানকে হত্যার করে দুই স্ত্রীকে নিয়ে এমন নাটক সাজিয়েছিলেন। তবে হত্যকাণ্ডের ১৫ বছর পর বাদী আকসেদ আলী সিকদার মারা গেলেও তার দুই স্ত্রীর দেওয়া আদালতে স্বীকারক্তিমূলক জবাববন্দীতে এসব তথ্য উঠে আসে। ১৩ বছর বয়সী সন্তানকে রেবেকা খাতুনকে হত্যা করেছিলেন বাবা আকসেদ আলী সিকদার।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রাজশাহী অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এমন তথ্য দেন পিবিআই রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ।
তিনি বলেন, প্রায় ২০ বছর আগের ২০০৪ সালের ১০ জুন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার লক্ষ্মীনগর এলাকায় ১৩ বছরের রেবেকা খাতুনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জেলার বাঘা থানায় ২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা আকসেদ আলী সিকদার। যদিও মামলার তদন্তের শেষ পর্যায়ে উঠে এসেছে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আকসেদ আলী নিজেই ১৩ বছরের সন্তানকে হত্যা করেছিলেন। একই গ্রামের প্রতিপক্ষ মোল্লা বংশকে ফাঁসানোর জন্য বাদী হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়ে মিথ্যা মামলা করেন।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাদী আকসেদ আলী সিকদার পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন, ঘটনার রাতে ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে তিনি দুই স্ত্রী ভায়েলা খাতুন (৬৫) ও আফিয়া বেওয়ার (৬০) সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। একটা পর্যায়ে সে জানতে পারেন কিছু দুষ্কৃতকারী আনুমানিক ৫০ জন তার বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। এসময় স্ত্রীর পরামর্শে আকসেদ আলী বাড়ির কিছু দূরে একটা মাঠিয়ালে (ছোট পুকুর) গিয়ে লুকিয়ে পড়েন। দুুষ্কৃতকারীরা তার বাড়ি থেকে চলে গেলে কিছুক্ষণ পরে সে বাড়িতে ফিরে এসে দেখে তার স্ত্রীর হাত রক্তাক্ত আর ছুরির আঘাতে তার কন্যা ১৩ বছরের রেবেকা খাতুনের পেটে থেকে নাড়ি-ভুড়ি বের হয়ে গেছে। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে রেবেকার মাথায় পানি দিতে থাকলে একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে সে মারা যায়।
পরে মেয়েকে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন আকসেদ আলী সিকদার। এ মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করেন তিনি। মামলাটি প্রথমে বাঘা থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে মামলাটি রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্তের জন্য নেয়। তারা তদন্ত শেষে ২০০৪ সালের ৩০ নভেম্বরে চার্জশিট দেয় ২০ জনের বিরুদ্ধে। আদালতে মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলে ১৮ বছর। পরে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী আদালতের বিচারক মনে করেছেন, এই মামলটি আরও তদন্ত হওয়া দরকার। তাই ২০২২ সালের ১৬ মে রাজশাহী পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের ভার দেন আদালত।
পিবিআই তদন্ত শুরু করে। তবে তদন্তকালে পিবিআইয়ের কাছে একটা বড় প্রশ্ন ছিল। গ্রাম্য জায়গায় রাত সাড়ে ১১টা গভীর রাত। এসময় ৫০ জন লোক এসে একটা ১৩ বছরের মেয়েকে মেরে চলে গেল। আর বাড়ির টিনে মাত্র দুইটি কোপের চিহ্ন ছিল। এটা কতটা বাস্তব। এই প্রশ্নকে সামনে রেখে মামলাটির তদন্ত শুরু করে পিবিআই রাজশাহীর উপ-পরিদর্শক খায়রুল ইসলাম।
তদন্ত করতে গিয়ে একটা পর্যায়ে বাদী আকসেদ আলী সিকদারের স্ত্রী ভায়েলা খাতুন ও নিহত রেবেকা খাতুনের মা আফিয়া বেওয়া আদলতে স্বীকার করেন আসামিদের ফাঁসানোর জন্য তাদের স্বামী আকসেদ আলী রেবেকাকে হত্যা করেছে। খুনের সময় বাধা দিতে গেলে তার দুই স্ত্রীর হাতের বিভিন্ন জায়গায় কোপ দেয়। মেরে ফেলার মূল কারণ ছিল প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো। যদিও তাদের নিজদের মধ্যে জায়গা জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের মামলা চলছে।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ বলেন, তারা আদালতের কাছে স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছেন আকসেদ আলী তার মেয়েকে হত্যা করেছে। যদিও আসামি আকসেদ আলী মারা গেছেন। আসামির দুই স্ত্রী এখন এই মামলার সাক্ষী।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল