ঈদের ছুটি সামনে রেখে যাত্রী পরিবহনে ফিটনেসবিহীন যানবাহন মেরামত শুরু হয়েছে বগুড়ায়। রং, ডেন্টিং পেইন্টিং, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নতুন বাস গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মোটরের ওয়ার্কসপ শ্রমিকরা।
আর মালিক পক্ষ থেকে লক্কর ঝক্কর মার্কা বাসগুলোকে রংচং করে নিয়ে দূরপাল্লার যাত্রীবহনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন চালকরা।
জানা যায়, এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্পের অংশ হলো ১৯০ কিলোমিটারে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক। প্রকল্পটি টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। চারলেনের সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে যানজটের সৃষ্টি হবে না। চারলেনের সড়কটি শেষ হবার কথা ছিল ২০২২ সালের এপ্রিলে।
দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা এই প্রকল্পের কাজ। তবে এখনো বেশ কয়েকটি স্থানে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় কাজ শেষ হয়নি। এখানো দুই লেনের যানবহন চলছে। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় গোবিন্দগঞ্জে এখনো নতুন সড়কের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। সেখানে সরু সড়কে একলেনে চলাচল করতে হচ্ছে প্রতিটি যানবাহনকে। একই ভাবে পলাশবাড়ি অংশে ফ্লাইওভার নির্মাণ করার কাজেও কোন অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত সেখানে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। যার কারণে রংপুর বিভাগে যাতায়াতকারী প্রতিটি যানবাহনকে এই অংশের যানজটের কবলে পড়তে হতে পারে এমনটিই আংশকা করছেন চালক ও মালিকরা।
একদিকে চার লেনের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ার ভোগান্তির সঙ্গে যোগ দিচ্ছে ফিটনেসবিহিন দূরপাল্লার যানবাহন। দূরপাল্লার যানবাহনগুলো রংচং করে নতুন করা হচ্ছে। যাত্রীদের দৃষ্টি কাড়তে এই অভিনব পন্থা বের করেছে বাস মালিক ও শ্রমিকরা। বগুড়া শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা মোটর গ্যারেজে বিভিন্ন রুটের যানবাহনগুলোর কাজ চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত গাড়ির রংচং করা হয়েছে। বনানী, সাবগ্রাম, চারমাথা, ভবের বাজার, মাটিডালিসহ বিভিন্ন এলাকার মোটর গ্যারেজে এখনো গাড়ির বিভিন্ন অংশ মেরামত করা হচ্ছে। এই ফিটনেসবিহীন বাসগুলোই ঈদের ছুটিতে দূরপাল্লায় যাত্রী পরিবহন করবে। বেশি দামে সিটের টিকিট বিক্রি করে লাভবান হতে এই কাজ করছে এক শ্রেণির মোটর মালিকরা। ঈদের ছুটিতে বগুড়া থেকে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামগামী বাসের কোন টিকিট পাওয়া যায় না। কর্মে ফেরার কর্মীরা তখন বিভিন্ন উপায়ে কর্মে ফেরেন। আর এই সুযোগ নিয়ে বসে ফিটনেসবিহীন বাসগুলো।
সাসেক প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক হামিদুল হক জানান, এখন কাজ দ্রুত চলছে। ঈদে আমরা বগুড়া অংশে চারমাথা এবং বারপুর অংশের আন্ডারপাসটি খুলে দিব। এটার কারণে যানজট অনেক কমে যাবে। তবে মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন অবৈধ গাড়ি গুলো কমানো না গেলে যানজট রোধ করা সম্ভব নয়। কারণ এই গাড়িগুলোই সড়কের মধ্যে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে এবং যানজট সৃষ্টি করে।
তিনি আরো বলেন, গত বছর ঈদে মহাসড়কে ৫৬টি এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর উপরে ১৮টি গাড়ি নষ্ট হবার রেকর্ড ছিল। এই গাড়িগুলো বেশির ভাগই মহাসড়কে চলার মতো উপযুক্ত নয়। একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলে তার সামনে পেছনে বিশাল আকারে যানজট দেখা দেয়।
বগুড়া শহরের মাটিডালি এলাকার একটি গ্যারেজ এর মালিক জানান, গত কয়েকদিনে বেশি কিছু বাসের সিট মেরামত, রং করে দেওয়া হয়েছে। আর কিছু বাসের জংধরা স্থানগুলো ঘষে পরিবর্তন করে দিয়ে পুরো বাস রং করা হয়েছে। চাকা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রতি ঈদের আগেই এমন বেশ কিছু বাসের কাজ করা হয়। এই বাসগুলো বগুড়া থেকে ঢাকায় চলাচল করবে ঈদের ছুটিতে।
বগুড়ার বাস চালক আশরাফ আলী জানান, ফোর লেনের কাজ করতে গিয়ে বগুড়ায় একদিকে সড়কের বেহাল দশা। এই সড়কের জন্যই বাসের বিভিন্ন পার্টস দ্রুত বিকল হয় যাচ্ছে। যেকারণে সড়কের মধ্যে বিকল বাস দেখা যায়।
তিনি বলেন, ঈদের আগে বগুড়া থেকে ঢাকার যাত্রীদের চাপ খুব বেশি থাকে। বাসে, ট্রাকে পিকআপে করেও পরিবহন করা হয়। তারপরও চাপ কমে না। এজন্য বিভিন্ন রুটের লক্কর ঝক্কর বাসগুলো ঈদের আগে মেরামত করে ঢাকা রুটে চলাচল করে থাকে।
বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্র জানায়, দুই ঈদ ছাড়া স্বাভাবিক সময়ে ২০ থেকে ২২ হাজার যানবাহন সেতু পারাপার হয়। ঈদের আগে তা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত পৌঁছায়।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়ন এর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, সড়কে অবৈধ যান ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেন না চলে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছি।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ঈদে উত্তরের যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করা হবে। এজন্য ফিটনেসবিহিন বাস যেন না চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মানুষের চলাচল নির্বিঘ্নে করতে মহাসড়কে সার্বক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। ঈদের ৭দিন আগে ও ৭দিন পরে মহাসড়কে অটোরিক্সা ও থ্রি হুইলার চলাচল করবে না। মহাসড়কের বিভিন্ন ওভারপাস পয়েন্টের মুখ খুলে দেয়া হবে। যেন যানজটের সৃষ্টি না হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত