কি করমু, ধান পাকা শুরু করছে আর আত্তির অত্যাচার বাইরা গেছে। রাইত দিন পাহারা দিয়া আর কত রাখমু। আত্তিরা খেতে নামলে সব ধান খাইয়া সাবার কইরা ফেলবো। তাই আত্তির ডরে কলাপাকা ধান কাইটারতাছি। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পানিহাটা ফেকামারী গ্রামের শিলা সাংমা (২৫) বলছিলেন এভাবেই।
শিলা সাংমার মতো ওই এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষকরা বন্য হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় আধা পাকা ধান বা কলা পাকাধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। হাতির দলকে প্রতিরোধ করতে তারা খেতের পাশে টং ঘর করে দিন রাত অবস্থান করে ফসল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী পানিহাটা ফেকামারী গ্রামের ভারতের সীমান্ত তারঘেঁষা ১০০-১৫০ একর জমিতে অর্ধশতাধিক কৃষক আমন ধান আবাদ করেছেন। ওই এলাকায় ধান পাকতে আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু ওই জমির পূর্ব দিকে তালতলা টিলায় পাহাড়ি জঙ্গলে কয়েকদিন ধরে ৪০ থেকে ৪৫টি বন্য হাতির দল অবস্থান করছে। সুযোগ পেলেই ধানখেতে নেমে আসে হাতির দল তখন এলাকাবাসী মশাল জ্বালিয়ে ও ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতির দলকে তাড়িয়ে দেন। এভাবেই চলছে হাতির সাথে কৃষকদের ধান বাঁচানোর লড়াই। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ওই এলাকায় দেখা যায় নিজেদের ধান কাটছে। আর মহিলা পুরুষ থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চারাও ধান কাটছেন, মাথায় কওে টিলায় রেখে ঠেলাগাড়ীতে করে বাড়ী নিয়ে আসছেন।
পানিহাটা গ্রামের মনিকা সাংমা (৩৫) বলেন, ২৫ কাঠা (১২৫ শতাংশ) জমি বর্গা নিয়ে ধান লাগাইছি। আত্তির লাইগা এই কাচা ধানই কাটতাছি। অহনা না কাটলে আত্তি সব ধান খাইয়া শেষ করলে পরে কিছুই পামু না।
ওই এলাকার কাজিমদ্দিন বলেন, গত বছর আত্তি আমার দেড় একর জমির সব ধান খাইয়া শেষ করে গেছে। আমি এ বছরও দেড় একর জমিতে ধান লাগাইছি। ধান পাকতে ও কাটতে আরও এক-দুই সপ্তাহ সময় দরকার আছিল। আত্তির লাইগা ধান আর পাকাইতে পারলাম না। তাই কলাপাকা ধান কাটতাছি।
বন বিভাগের গোপালপুর বিট কর্মকর্তা সাব্বির জাহাঙ্গীর বিন ওয়ালি বলেন, কয়েকদিন ধরে পানিহাটা ফেকামারীর পাশেই তালতলা জঙ্গলে ৪০ থেকে ৪৫টি বন্য হাতির দল অবস্থান করছে। সমতলে হাতি প্রতিরোধে বন বিভাগের কর্মকর্তাসহ এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ