বগুড়ার শিবগঞ্জে নবান্ন উপলক্ষে ২০ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে চলছে নানা উৎসব। প্রতিবছর নবান্নকে ঘিরে উপজেলার উথলী বাজারে বসে মাছের মেলা। দুই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী একদিনের এই মাছের মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বড় বড় দেশীয় মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন মাছ ব্যবসায়ীরা। এটি নবান্ন শস্যভিত্তিক একটি ঐতিহ্যবাহী লোকজ উৎসব।
জানা যায়, প্রতি বছর নবান্ন উপলক্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জ উথলি, মোকামতলা, মহাস্থান এলাকায় বসে মাছের মেলা। পুরাতন এই মেলার মূল আকর্ষণ বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ। মেলায় একদিনে কয়েক কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয় বলে জানিয়েছে মেলা কমিটির আয়োজকরা।
বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে শনিবার ১ অগ্রহায়ণ। এ দিন বাঙালিরা নবান্ন উৎসব পালন করেন। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর বসে মাছের মেলা। এ উপলক্ষে উথলী, রথবাড়ী, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকনপাড়া, গরীবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, মেদেনীপাড়া, বাকশন, গণেশপুর, রহবল শিবগঞ্জসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে চলে নানা আয়োজন। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়েজামাইসহ আত্মীয়স্বজনদের আগে থেকেই নিমন্ত্রণ করা হয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে তারা নতুন ধানে নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠেন। অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই গ্রাম-বাংলায় চলে নব্বান্ন উৎসব। নতুন ধান কাটা আর সেই সাথে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।
কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির গ্রাম-বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। দেশের সব ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর কাছে এ উৎসব একটি সার্বজনীন উৎসব।
মেলার মাছ ব্যবসায়ী শিহাব মুকুল ও পুলক জানান, প্রতি বছর বাংলা ৩ অগ্রহায়ন এই উথলী মাছের মেলায় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ আসে। মেলা উপলক্ষে প্রচুর মাছ বেঁচাকেনা হয়ে থাকে। মেলায় আগের দিন রাত থেকেই মাছ আসতে শুরু করে। আর বেঁচাকেনা হয় কাকডাকা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, মেলায় প্রতি কেজি বাঘাইড় ১৩০০ টাকা, বোয়াল ১৪০০ টাকা, রুই, কাতলা ও চিতল মাছ ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ৩০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে ব্রিগেড ও সিলভার কার্প মাছ বিক্রি করা হয়।
মেলার আরেক মাছ ব্যবসায়ী জানান, ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্ততঃ ৫ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। মেলায় মাছ সরবরাহের জন্য সেখানে রাত থেকে ২০টি আড়ৎ খোলা হয়। সেসব আড়ৎ থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা পাইকারি দরে মাছ কিনে মেলায় খুচরা বিক্রি করেন।
মাছ কিনতে আসা কাব্য দেব, কান্তি দেব, রবিন্দ্র পাল ও উৎপল মোহন্ত জানান, আদিকাল থেকে এই এলাকায় সকল স¤প্রদায়ের মানুষ প্রতিবছর এই নবান্ন উৎসব পালন করে থাকেন। এদিন এই এলাকার প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের আগমনে মিলনমেলায় পরিণত হয়। মূলত তাদের জন্যই বড় বড় মাছ কিনতে মেলায় আসা হয়। আমরা দাদার কাছ থেকে শুনেছি প্রায় দুইশ বছরের পুরানো এ মেলা। রাত ১২টার পর থেকেই শুরু হলেও ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকে এ মেলা।
স্কুল শিক্ষক কনক দেব জানান, মেলায় আসা বিশাল আকৃতির মাছ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সবচেয়ে সাড়া ফেলেছে নতুন আলু। মেলায় প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা। এছাড়াও কেশুর ২০০ টাকা এবং মিষ্টি আলু ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
শিবগঞ্জ উথলি মাছ মেলা কমিটির ইজারাদার আজিজুল হক জানান, বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে প্রতিবার এই অগ্রহায়ন মাসে নবান্ন উপলক্ষ্যে একদিনের মাছের মেলা হয়ে আসছে। এলাকার মেয়ে জামাই আত্মীয় স্বজনদের নানা ধরণের দেশীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মেলায় আসা বড় বড় দেশীয় প্রজাতির মাছ।
বিডি প্রতিদিন/এএম