১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৯:১৪

নন্দীগ্রাম হানাদার মুক্ত দিবস কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

নন্দীগ্রাম হানাদার মুক্ত দিবস কাল

নন্দীগ্রাম উপজেলার বামনগ্রামে গণকবর স্মৃতিসৌধ

বগুড়ার নন্দীগ্রাম ৫২তম হানাদার মুক্ত দিবস আগামীকাল বুধবার। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাক-হানাদার ও রাজাকারদের হটিয়ে নন্দীগ্রাম হানাদার মুক্ত করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন।

জানা যায়, যুদ্ধচলাকালে মুক্তিযোদ্ধারা আবু বক্কর সিদ্দিকের নেতৃত্বে ভারতে ইউপি ডেরাডং সাব ডিভিশনে ভান্ডুয়া সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৭ নম্বর সেক্টরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তারা বাংলাদেশের হিলি সীমান্ত ও আক্কেলপুর হয়ে দেশে প্রবেশ করার সময় প্রথমে সেখান থেকেই পাক সেনা ও রাজাকারদের সাথে যুদ্ধ শুরু করেন। বীর সন্তানেরা বগুড়ার নন্দীগ্রামে আশার পথে কাহালুর কড়ই নামুজা গ্রামে পাক-হানাদারদের সাথে যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে ২৮ জন পাক সেনা নিহত হয়েছিল। আবু বক্কর সিদ্দিকের নেতৃতে ৯ ডিসেম্বর নন্দীগ্রামে প্রবেশ করেন সেখানকার ডেপুটি কমান্ডার বদিউজ্জামান মন্টু, টিম কমান্ডার আজিজুল হক, সিরাজুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীরসহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

৩ দফায় নন্দীগ্রামে যুদ্ধের কাজ শুরু হয়। প্রথমে ১১ ডিসেম্বর নন্দীগ্রাম (বর্তমান পৌর এলাকা) মন্ডল পুকুর সিএন্ডবি ব্রিজের কাছে পাক-সেনা ও তাদের দোসরদের ওপর আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। ওইদিন রণবাঘা বড় ব্রিজের কাছেও স্থানীয় রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। বেলঘরিয়ায় পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হলে পূর্ণখান নামে একজন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকসেনা ও তাদের দোসররা কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। যুদ্ধকালীন অনেক মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছে।

পাকসেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান নন্দীগ্রামের চাকলমা গ্রামের আকরাম হোসেন, বাদলাশন গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ, রুস্তমপুর গ্রামের মহিউদ্দিন (মরুমন্ডল), ভাটরা গ্রামের আব্দুল সোবাহান, নন্দীগ্রামের মোফাজ্জল হোসেন, হাটকড়ই গ্রামের ছমির উদ্দিন ও তার দুই ছেলে আব্দুল রাজ্জাক ও আব্দুল রশিদ। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর থানায় আক্রমণ চালিয়ে প্রায় দুই শতাধিক পাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে লড়াই করে মুক্তিযোদ্ধারা। যুদ্ধে ৮০ জন রাজাকারদের আটকসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। নন্দীগ্রামে সব চেয়ে স্মরণীয় ঘটনা ঘটে ডাকনীতলায়। সেখানে পাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন মরণ যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর পাক-হানাদার ও রাজাকারদের হটিয়ে নন্দীগ্রাম হানাদার মুক্ত করা হয়। ওইদিন বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন।

তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মরহুম আবু বক্কর সিদ্দিকসহ বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা গার্ড অব অনার প্রদর্শন করেন। তৎকালীন এমপি আকবর আলী খান চৌধুরী গার্ড অব অনার প্রদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।

আগামীকাল বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ৫২তম হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর