টানা চার দিন দেখা নেই সূর্যের, সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে হিমালয়ের পাদদেশের জনপদ লালমনিরহাট। আর এ কারণে হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বাড়ছে।
সূর্যের দেখা না থাকায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সোমবার বিকেল থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো পড়েছে কুয়াশা। কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে পুরো জনপদ। সবমিলে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় লালমনিরহাটের জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ। ঠাণ্ডায় কাজে যেতে না পেরে অনেকটা সংকটে পড়েছেন নিম্ন আয়ের দিনমজুর ও শ্রমিকরা। হিমেল হাওয়ায় বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে তিস্তা-ধরলা নদী পাড়ের মানুষ। ঠাণ্ডা বাতাসে ঘরে থাকাও দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষদের।
তিস্তা চরাঞ্চলে আজগর আলী (৬৫) নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এমন ঠাণ্ডা বাহে কোনোদিন দেখি নাই। দিনে তো গাছের পাতায় আগুন দিয়ে শরীর গরম করি। রাত হলেই ভাঙা বেড়া দিয়ে হুহু করে বাতাস ঢুকে হাড় পর্যন্ত ঠাণ্ডা করে দেয়। ছাওয়া পোয়া (সন্তানদের) নিয়া কষ্টে রাত কাটে বাহে। নিন্দ (ঘুম) হয় না ঠিকমতো।’
রিকশাচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, ঠাণ্ডার কারণে লোকজন কম বাইরে তাই আয়ও কম। কনকনে ঠাণ্ডায় বসে থেকে খালি পকেটেও বাড়ি ফিরতে হয় কোনো কোনোদিন।
টানা ঠাণ্ডায় মানুষসহ গবাদি পশুপাখিও নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্তদের ভিড়ও বেড়েছে জেলার সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। বিশেষ করে শিশু আর বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া আর ডায়রিয়ায়। প্রতিদিন শত শত রোগী ভিড় করছে সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে। ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। গত চার দিনে জেলা সদর হাসপাতালসহ ৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬৭ জন ঠাণ্ডাজনিত রোগী ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সির্ভিল সার্জন ডা: নির্মলেন্দু রায়।
আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আজমল হক বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বহির্বিভাগে একাই দৈনিক প্রায় ৬০-৬৫ জন রোগী দেখছি। সব শিশুই আসছে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে। খুব বেশি আক্রান্তদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ছিন্নমূল মানুষদের শীত নিবারণের জন্য ইতোমধ্যে পাঁচ উপজেলাতে ২৪ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণ চলছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল